ট্রায়া আমাদের পরর্বতী গন্তব্য কী?
ট্রায়া ভ্রুঁ কুঞ্চিত করে বলল,"মহামান্য প্লিউরা আমাদের পরর্বতী গন্তব্য মানব জাতি!"
মহামান্য প্লিউরা অবাক দৃষ্টিতে বললেন,"আমার জানা মতে মানব জাতির চিন্তাধারা নিন্ম স্তরের।তাদের উপর অনুসন্ধান করব কেন?"
ট্রায়া বলল,"মাহামান্য প্লিউরা এটা ঠিক যে তাদের চিন্তাধারা খুবই নিন্ম পর্যায়ের কিন্তু তাদের কিছু অসাধারন বৈশিষ্ট্য আছে।"
ট্রায়া একটু থেমে বলল,"মানব সম্প্রদায়ের চিন্তধারা নিন্ম স্তরের হলেও তাদের মত আবেগ অন্য সম্প্রদায়ের নেই।তাদের যেমন উচ্চ স্তরের আবেগ আছে,তেমনই তারা সময়ের সাথে নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে।"প্লিউরা রেগে যাচ্ছেন কিন্তু প্রকাশ করছেন না।তিনি বললেন,"ট্রায়া।"
"জ্বী মহামান্য প্লিউরা"
"অক্ষৌহিনীরা কী সময়ের বিবর্তনে নিজেদের পরিবর্তন করতে পারে না?"
"জ্বী না,মহামান্য প্লিউরা?"
"ট্রয়া,এই ক্ষমতা কী আমার নেই?"
"মাহামান্য প্লিউরা,আপনার ক্ষমতা অসাধারণ নেতৃত্ত্ব দেওয়ার।আমাদের অনুসন্ধান মতে,এই অসাধারণ ক্ষমতা অক্ষৌহিনীদের নেই।"
ট্রয়া আবার বলতে লাগল,"কিন্তু মাহামান্য প্লিউরা অক্ষৌহিনীদের অনেক বছর পরপর কিছু অসাধারণ ক্ষমতা জন্মায়।আপনার কী ইরাসের কথা মনে আছে?আমার জানামতে ইরাস সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করার কৌশল খুব ভালোভাবে জানে।"
"আমরা কী এই অনুসন্ধানের জন্য তাকে নির্ধারণ করেছি?"
" জ্বী মহামান্য প্লিউরা।আর আপনি হয়তো জানেন আমাদের পূর্বপুরুষদের আবেগ ছিল।তারা আমাদের আবেগ শুন্য করেছেন।আর আবেগকে বেগুনী রং দিয়ে চিহ্নিত করেছেন।তাই এই অনুসন্ধান আমাদের নবদিগন্তের সূচনা করতে পারে।
"ইরাস! তুমি জানো আমরা অক্ষৌহিণীরা বহুকাল যাবত মহাকালের রহস্য অনুসন্ধান করছি।"
"জ্বি, মহামান্য প্লিউরা।"
"আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানের জন্য তোমাকে নির্ধারণ করেছি। তোমার মতামত কী?"
"মহামান্য প্লিউরা, জ্বি আমি রাজি তবে আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে অনুসন্ধানে সুবিধা হবে।"
"ঠিক আছে,আমরা বিবেচনা করব।"
ইরাস হল রুম থেকে বের হয়ে একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করল।এমনটা তো আগে কখনো হয় নি। তাহলে হঠাৎ এমন হচ্ছে কেন! এর উৎস ই বা কি?
মিলি খিল খিল করে হাসছে। ইরাস অনেকটা হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলির দিকে। মিলি প্রায় প্রতিদিনই তার নাম দিয়ে হাসাহাসি করে। আজও করছে, কিন্তু ইরাসের ভালো লাগে। মানুষের হাসি আবেগের একটা অংশ। সে মানব জাতিকে নিয়ে যত অনুসন্ধান করছে,ততই অবাক হচ্ছে।
অক্ষৌহিণীরা আনন্দ প্রকাশ করে অনুসন্ধান করে। আর মানব সম্প্রদায়ের আনন্দ প্রকাশের কৌশলগুলো বড় অদ্ভুত, কিন্তু সুন্দর! তাদের আনন্দ প্রকাশের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে হাসি। হাসির মধ্যেও আবার অনেক ভিন্নতা রয়েছে। কিশোরীদের হাসি হচ্ছে সবচেয়ে আন্তরিক। এই হাসির সঙ্গে সবাইকে হাসতে হয়। তাদের দুঃখ প্রকাশের মাধ্যম কান্না, কিন্তু তারা হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে কি বিচিত্র!
অক্ষৌহিণীদের কোনো দুঃখ নেই। তাই দুঃখ সম্পর্কে আমার জানা কিংবা বোঝার কথা নয়। কিন্তু আমি দুঃখ নামক আবেগটা খুব ভালোভাবে বুঝি! কিন্তু কিভাবে?
মানব সম্প্রদায়ের আবেগের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে "ভালোবাসা "। আমি এটা আজো সম্পূর্ণ বুঝতে পারি নি।অবশ্য বুঝতে না পারাটাই স্বাভাবিক।
"ট্রায়া আমাদের অনুসন্ধান কতদূর? "
ট্রায়া চুপ করে রইল।মহামান্য প্লিউরা আবার বললেন,"ট্রায়া চুপ করে থেকো না,কথা বলো।"
"মহামান্য প্লিউরা,একটা সমস্যা হয়েছে।"
"তাহলে যেটার আশংকা ছিলো সেটাই হয়েছে।"
"জ্বি মহামান্য প্লিউরা।"
"ইরাসের সাথে কি যোগাযোগ করা যাবে?"
"আপনি কি ট্যালিপেথিক যোগাযোগ করবেন,মহামান্য প্লিউরা?"
"না,সরাসরি কথা বলব।"
"ব্যাবস্থা করছি মহামান্য প্লিউরা।"
আমি ইরাস:
আমি নদীর পাড়ে বসে আছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা, গভীর রাতে কত সুন্দর লাগে এই প্রকৃতিকে কিন্তু প্রকৃতি কি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রূপ নেয়? আগে তো কখনো এমন সৌন্দর্য দেখি নি! এখানটাতে নিঝুমতা বেশি।জোছনার আলোয় নদী তার রূপ ছড়িয়ে দিয়েছে। যে রূপ কখনো দেখা যায় না। এই রূপ নিশাচরদের জন্য, যারা জীবনের প্রতি মুহূর্তে পরাজিত হয়েছে, নিজের কাছে, জীবনের কাছে !
এই সৌন্দর্য শুধু তারাই উপভোগ করতে পারে, যাদের ভিতরটা সুন্দর। তারা না যারা কর্দয, কারণ তারা গভীর অন্ধকারে আলোর সন্ধান পায়, পেতেও চায় না।
শুধু এখানে বসে থাকলে চলবে না। সৌন্দর্যের সন্ধানে যেতে হবে, নিস্তব্ধ রাতের শহরে। আমি হাঁটছি, সৌন্দর্যের সন্ধানে। এত সৌন্দর্যের মাঝেও বিষণ্নতা! কি চায় এই প্রকৃতি, কেউ কি তাকে বুঝতে পারবে, পারবে অনুভব করতে? নাকি সে চিরকাল একা থাকবে, গভীর বিষণ্নতায়!
"ইরাস, তুমি কি জানো তোমার কাজ কি?"
"জ্বি,মহামান্য প্লিউরা।"
"আমার মনে হয় তুমি জানো না।তুমি অসম্ভব ক্ষমতাধর এটা জানো?"
প্লিউরা থেমে বললেন,"তুমি মানব জাতির আবেগ নিজের মধ্যে ধারন করেছ এটা কি জানো?"
"আবেগ" অক্ষৌহিণীদের জন্য মহা বিপদজনক এটা তোমাকে বলা হয়েছিলো। এখন তোমার একটাই উপায়"আবেগ বিসর্জন দেওয়া।"
"আপনি আমাকে কি করতে বলছেন মহামান্য প্লিউরা?" ইরাস অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
"যে মানব সন্তানটি তোমার সাথে আবেগে জড়িয়ে তাকে হত্যা কর। নয়তো শর্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।তুমি বিশেষ ক্ষমতাধর তাই তোমাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।বাকিটা তোমার সিদ্ধান্ত। "
ইরাস খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল,"আপনি শর্ত সাপেক্ষে কাজ করুন।" ইরাসের গলা জড়িয়ে যাচ্ছে।
"মহামান্য প্লিউরা আমি কি আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারি?" তার দৃষ্টি গম্ভীর হয়ে গেল, নির্বিকার দৃষ্টি। এই দৃষ্টির গভীরতা অক্ষৌহিণীরা কখনো বুঝবে না।
মিলি ইরাসের সঙ্গে অনেক্ক্ষণ রাগারাগি করল।এটাও আবেগের অংশ। ইরাস বলল,"মিলি আমাকে যে চলে যেতে হবে।"
মিলি রাগী রাগী ভাবে বলল,"আপনি হঠাৎ উধাও হয়ে যাবেন না। ঠিক আছে? এখন যেতে চাইছেন যান। কথাটা মনে থাকে যেন।" মিলি আবারো বলল,"আবার কবে দেখা হবে?"
"হবে হয়তো। ভালো থেকো।যাই। ঠিক আছে?"
ইরাস হাটছে,গভীর বিষাদ নিয়ে। বিষন্নতায় কুকঁড়ে যাচ্ছে সে।
এখানকার বর্ষাও খুব সুন্দর। ঝোঁ ঝোঁ বৃষ্টির শব্দে একটা ঘোর তৈরি হয়েছে। তার চোখও ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে,এটাই কি তাহলে "ভালোবাসা "!