অদ-ভূতঃ সমান্তর ধারা


 

কয়েকটি প্যাটার্নযুক্ত সংখ্যা গাণিতিক অপারেটর দিয়ে যুক্ত থাকলে তাকে আমরা ধারা বলি। প্যাটার্নযুক্ত সংখ্যা বলতে বুঝাচ্ছি, সংখ্যাগুলোর মধ্যে একটা সম্পর্ক থাকবে। যেমনঃ

১+২+৩+৪…. এই ধারার সম্পর্ক হল এরা স্বাভাবিক সংখ্যা বা এদের একটা সংখ্যার সাথে ১ যোগ করলে পরের সংখ্যা বা পদ পাওয়া যায়।

 

সমান্তর ধারা বলতে বুঝায় ধারার প্রতি পদের পার্থক্য (পরের পদ – আগের পদ) সমান । এই ধারণাটাকে এভাবে বুঝা যায় একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকবে যেটা ধারা একটা পদের সাথে যোগ করলে ঠিক তার  পরের পদ পাওয়া যাবে। যেহেতু প্রতি পদের সাথে একটা সংখ্যা যোগ করলে পরের পদ পাওয়া যাবে। তাহলে  যদি আমি প্রথম পদকে a আর নির্দিষ্ট যে সংখ্যাটা যোগ করব তাকে d ধরি, তাহলে সমান্তর ধারার বীজগাণিতিক রূপ হবে –

a+(a+d)+(a+d+d)+(a+d+d+d)+....

a+(a+d)+(a+2d)+(a+3d)....

 

গণিতে বেশিরভাগ সময়ই একটা বাক্যকে বীজগণিত দিয়ে প্রকাশ করা হয় । কারণ বীজগণিতে নির্দিষ্ট সংখ্যা না ধরে চলক ধরা হয় যাতে যেকোনো মানের জন্য একটা জেনারেল ফর্ম  দাঁড়া করানো যায়। তাই প্রথম পদকে a, নির্দিষ্ট সংখ্যাকে d (difference) ধরেছি। এই বীজগাণিতিক রূপ থেকে সমান্তর ধারার সাধারণ পদ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা এই জিনিসটাই ভিন্নভাবে দেখব। আমাদের সাথে থাকবে বল্টু আর মন্টু!

 ধারার ফাঁদে বল্টু

 

বল্টু:  সমান্তর ধারার n তম পদ তো a+(n-1)×d। কিন্তু কেন?

 

মন্টু: হুম্, nতম পদ না!তাহলে ধারা কি? এটা দিয়ে শুরু করা যাক। কোনো অনুক্রমকে গাণিতিক অপারেটর দিয়ে সাজালে যা পাওয়া যায় সেটাই ধারা।

বল্টু: ইম্,কিন্তু অনুক্রম কি?

 

মন্টু: অনুক্রম না? তোমারা যখন স্কুলে অ্যাসেম্বিলি কর।তখন এভাবে দাড়াও না যেন খাটোরা সামনে লম্বারা পিছনে দাড়ায়। গণিতের ভাষায় একে বলে অনুক্রম।

 

বল্টু:আপনার কথার আগা গোরা কিছু বুঝতে পারলাম না।

 

মন্টু: তুই আসলেই একটা বল্টু। অনুক্রম মানে বিশেষভাবে সাজানো। আর ঐ সজ্জাটারই গাণিতিক নাম অনুক্রম। যেমন: স্কুলে ছোট্ট ছেলেটা আগে দাড়ায়,তার থেকে একটু লম্বাটা তার পেছনে।এখানে একটা বিশেষ সজ্জা আছে তাই এটাকে অনুক্রম বলেছি।

অনুক্রমকে সংখ্যায় লেখলে হবে এমন, 1,2,3,4..... এখানে 2, 1থেকে বড়। 3,2 থেকে বড়ো। প্রতিক্ষেত্রে 1 করে বাড়ছে। বুঝছিস?

 

বল্টু: হু।

মন্টু: এই অনুক্রমটাকে যদি অপারেটর দিয়ে লিখিস তাহলেই ধারা হবে।যেমন: 1-2-3...।

বলতো এটা ধারা নাকি: 2-7-6-10...

বল্টু: না।কারণ এখানে কোনো সম্পর্ক নেই।মানে একটার সাথে অন্যটার সম্পর্ক নেই।

 

মন্টু: গুড।এখন ধারার মধ্যে একপ্রকার ধারা হলো সমান্তর ধারা। এই ধারার উপাদানগুলোর মধ্যে সম্পর্কটা এরকম যে,

এক উপাদান থেকে অন্য উপাদানের পার্থক্য বা অন্তর সমান। যেমন ধর,1+2+3+4...

এখানে প্রতি উপাদানের পার্থক্য 1। আবার -1-2-3-4-... এটাও সমান্তর ধারা। 1-2-3-4-... কিন্তু সমান্তর না। (পাঠকরা ভাবুন তো!)  বুঝছিস?

 

বল্টু: হু।

মন্টু: এখন আসল মজা!আচ্ছা বলতো  

1+2+3+4+... এখানে 4তম পদ কি?

বল্টু: 4!

মন্টু: 5 তম পদ?

বল্টু: 5। উফ্,তুমি যে কেমনতর প্রশ্ন করো!

বল্টু: আরে,এখনই আসল মজা! 2+4+6+...

এখানে 5তম পদ কি?

বল্টু: ইম,জোড় সংখ্যাতো 10। এছাড়াও এভাবে বের করা যায়,যেহেতু সবসময়ই পার্থক্য 2 তাই সমান্তর ধারা।সুতরাং 4 তম পদ 6+2=8, 8+2=10।

মন্টু: exactly! দেখ তোকে যেই পদ বের করতে বলি তখনই তুই ঐটার আগের পদ বের করিস্, তারপর ঐ পদ। তোকে যদি 100 তম পদ বের করতে বলি?

বল্টু: ও মাগো!পুরো রস বের হয়ে যেত!

মন্টু: এখানেই গণিতবিদের চিন্তা শুরু।তারা কোনো পদ বের করার জন্য ঐ পদের আগেরটার সাহায্য না নিয়ে একেবারে প্রথম পদের সাহায্য নেয়ার চেষ্টা চালালেন।ফলে প্রক্রিয়াটা সহজ হয়ে যায়।

যেখানেই আমাদের চিন্তা থমকে যায়, গণিতবিদরা সেখান থেকে শুরু করেন।

 

1+2+3+4....

দেখ এখানে সবপদের সাথে প্রথম পদের সম্পর্ক করব।

বল্টু: দাঁড়াও।তুমি কেন শুধু এই ধারাটা নিয়ে কাজ করছ?

মন্টু: এই ধারাটা নিয়ে কাজ করলে চিন্তাগুলো সহজেই বোঝা যাবে।আর একবার এইটা বুঝে গেলে অন্য জল্পনা সহজ হয়ে যাবে। আবারো বলছি এখন সম্পর্কটা হবে 1ম পদের সাথে। কারণ যদি এই ধারায় 100 তম পদ বের করতে বলে তখন বের করব, 4+1=5, 5+1=6, 6+1=7.... এখন একটু থামি আমারা কি এভাবেই আজীবন করতে থাকব? তাই গণিতবিদরা ফর্মূলা আবিস্কার করার চেষ্টা করতে থাকলেন।

বল্টু: কিন্তু আমরা তো ফমূলা জানি!

মন্টু: ইস্, ধর তুই জানিস না। তো যেটা বলছিলাম, যেহেতু সমান্তর ধারা তাই যেকোনো পদের সাথে পার্থক্য যোগ করলে পরের পদ পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা  এমন কিছু করব যাতে প্রথম পদের সাহায্যে যেকোনো পদ বের করতে পারি।ধর জিনিসটা এমন যে,প্রথম পদের সাথে কিছু যোগ করলে অন্য পদ পাব।

বল্টু: কিন্তু ঐ কিছুটা কি?

 

 

মন্টু: দেখ,1+2+3+4... এখানে 3তম পদ বের করব 1 পদ দিয়ে। 1+(1+1) এটা 3th পদ।

 

4th পদটা হলো, 1+(1+1+1)। পুরোটা সাজাই,

1+(1+1)+ {1+(1+1)} + {1+(1+1+1)}....। এখানে কিছু দেখতে পাচ্ছিস!

 

বল্টু: কই,নাতো!

মন্টু: দেখ এখানে কিন্তু গুণের সম্পর্কটা আছে। গুণের আর্বিভাবের গল্পটা কি শোন। যখনই একটা সংখ্যা বারেবারে যোগ করতে হয়,তখন কিন্তু সেটা অনেক কষ্টের হয়।তাই কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য গণিতবিদরা প্রসব করলেন নতুন অপারেটর গুণ!

বল্টু: ওওওও! তাই।

মন্টু: যেহেতু গুণের কথা বললাম এই ফাঁকে সংখ্যা নিয়েও একটা জিনিস বলি।সংখ্যা নিয়ে বলতে গেলে যার নাম সবার আগে আস তিনি হলেন পিথাগোরাস। তিনি ভাবতেন,১ হলো ঈশ্বরের সংখ্যা,২ প্রথম নারী সংখ্যা,৩ প্রথম পুরুষ সংখ্যা। ২+৩=৫ তাই ৫ বিবাহ সংখ্যা।আর আমার মতে,[লেখকের] ৬ হলো প্রথম শিশু সংখ্যা।কারণ ৬=২×৩।মানে ৬ এর মধ্যে ২ আর ৩ এর মিলন ঘটেছে।

মন্টুর কথা শুনে বল্টু ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে রইল, তাই সে আবার মূল আলোচনায় ফিরে গেল।

মন্টু: এখন দেখ 3th পদটা 1+(2×1)। 2nd টা নিয়ে পরে কাজ করব।

4th টা 1+(3×1)।এখন 3th পদে যে 2 এটাকে 3-1 লিখতে পারি।

বল্টু:কেন এভাবেই লিখব?

মন্টু: ফাস্ট ব্রেকেটের ভিতর একটু তাকা। সেখানে 3th পদে 2, 4th পদে 3।মানে কি? প্রতিপদে এক করে কমছে।

তাই 3th পদকে এভাবে লিখতে পারি 1+(3-1)×1,4th পদকে 1+(4-1)×1। এছাড়াও এভাবে লেখলে জিনিসটা একটু সহজ হয়। কেমন সহজ? সেটা একটু পর দেখতে পারবি!

তোর কথা হতে পারে 1 গুণ হবে কেন?ঐযে,প্রথমে যে লিখছি,3rd পদ হলো 1+(2×1),এই 2 হলো এখন (3-1) আর 2 এর সাথে গুণ 1 হলো (3-1)এর সাথে গুণ থাকা 1।এভাবেই 4thপদ 1+(4-1)×1, 2rd পদ 1+(2-1)×1। এখন বুঝতে পারছ কেন 2rd পদ নিয়ে পরে কাজ করলাম। কারণ সবগুলো পদকে এক রূপে নিয়ে যাবো।যদি শুরুতেই 2nd নিয়ে কাজ করতাম জিনিসটা জটিল হতো। এখনই ঘটনা ঘটে গেছে। দেখ আমরা প্রতিটা পদকে নিদিষ্ট রূপ দিলাম।

আবার দেখ 3rd পদটা 1+(3-1)×1। এখানে গুণাকারে থাকা 1টা কি? এটা কিন্তু প্রতি পদের পার্থক্য।

বল্টু: তাইতো কিন্তু কিভাবে এলো এটা?

মন্টু: দেখ, ধারাটা 1+2+3+4...। তো আমরা প্রথমে কি করেছিলাম, 3rd পদকে  কিভাবে লিখেছিলাম?

বল্টু: 1+(1+1) এভাবে।

মন্টু: ব্রাকেটর 1 দুটো কি! 1 থেকে 3 পযর্ন্ত প্রতি পদে বৃদ্ধি পাওয়া পার্থক্য। মানে 1st পদ থেকে 3rd পদ পযর্ন্ত পার্থক্য।

1+1=2,[2rd পদ] আর 2+1=3 [3rd পদ]। অর্থাৎ সরাসরি লিখলে 1+(1+1) !

বল্টু: তাই তো কি সুন্দর !

মন্টু: এখন যেহেতু সব কিছু বুঝে গেছিস। এখানেই মজার শুরু ! দেখ

3rd পদ= 1+(3-1)×1।

4th পদ= 1+(4-1)×1।

 

তখন বলেছিলি না, যে কেন এইভাবে লিখেছি। দেখ 3rd পদ বের করার জন্য ব্রেকেটে 3 থেকে 1 বিয়োগ করেছি। ফলে যেকোনো পদ বের করতে চাইলে ব্রেকেটের ভিতরে ঐতম পদ থেকে 1 বিয়োগ দিব।

এখন আমারা যেকোনো পদের মান বের করব। সেটা হলো

যেকোনো পদ= ঐ ধারার প্রথম পদ + (ঐ তম পদ-1)×প্রতি পদে পার্থক্য।

 

যখনই এটা লিখলাম আমার কাজ শেষ ফর্মুলা রেডি।

আর এটাকে পরিবর্তন করলে হবে

nতম পদ= a+(n-1)d।

a বলতে 1st পদ বোঝানো হয়েছে।

বল্টু: দারুণ তো! আচ্ছা তুমি যে বললে অনুক্রমে অপারেটর ব্যবহার করলে ধারা হবে। কিন্তু ধারার মধ্যে তো শুধু যোগ আর বিয়োগ; ব্যবহার করতেই দেখি। গুণ, ভাগ ব্যবহার করলে কি হবে?

 

মন্টু: হুম, এটা তুমি নিজে চেষ্টা করে দেখ।যদি কিছু না পাও আমি তো আছিই!

বল্টুর চোখে একটা চাপা চমক ! সে এখন তার মাথা নষ্ট করবে, ভেবে ভেবে !

 

মন্টুর প্রস্থান!

 

সমান্তর ধারার সমষ্টি

 

সমান্তর ধারা আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। আমরা সবসময়ই এই ধারা ব্যবহার করে থাকি। তবুও গণিতের কাছে এলেই আমাদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। গণিত আমাদের জীবনের সীমাবদ্ধতা যেমন দূর করেছে, চিন্তার বেলাতেও স্বাধীনতার পূর্ণ ব্যবহারে সাহায্য করেছে।

 

বল্টু এখন পড়ালেখার পাটচুকিয়ে ব্যবসায় মন দিয়েছে। প্রতিদিন তার বাবার দোকানে বসে, এই ফাঁকে তার হাতের কাজটাও সেরে নেয়। প্রথম দিন ব্যবসার অবস্থা ভালো করে দেখার পর, দ্বিতীয় দিন থেকে হাতের কাজ শুরু! এই কাজের মূল উদ্দেশ্য ক্যাশ বক্স থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা সরিয়ে ফেলা! দিন যাচ্ছে বল্টু কাজটা ভালো মতোই সারছে। আর ব্যবসা উঠছে লাটে।

 

৬ মাস পর বল্টুর বাবা ব্যবসার অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তিনি এখন বল্টুর উপর ক্ষিপ্ত। বল্টুর এবার আর পালানোর সুযোগ নেই। বল্টুর বাবা হিসাবের খাতা খুলে দেখলেন বল্টু দ্বিতীয় দিন থেকে টাকা চুরি শুরু করেছিল। ৫টাকা দিয়ে  শুরু, তারপর প্রতিদিন আগের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি করে নিচ্ছিল। বল্টুর বাবার মাথায় হাত!

 

আচ্ছা পাঠক কি বলতে পারবেন বল্টু মোট  কত টাকা চুরি করেছিল?

এই সমস্যার সমাধান ঐ ধারা থেকেই করতে হবে। ধারাটা হবে–

 

০+৫+১০+১৫+২০+....

 

উপরের ধারার প্রতি পদে ৫ যোগ হয়েছ, এটা একটা সমান্তর ধারা। এখন আমাদের প্রথম থেকে ৩৬৫ পদ পর্যন্ত পদের যোগফল বের করতে হবে। তাহলে আমাদের একটা একটা করে যোগ করে যোগফল বের করতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু একটা করা প্রয়োজন যাতে সহজেই যোগ করা যায়। এই কাজটা করেছিলেন মহান কার্ল ফ্রেডরিখ গাউস। তিনি পিচ্চিকালে এই সমস্যার সমাধান করেন। কিভাবে করেন সেটা জানার জন্য পিছনে যেতে হবে। পিচ্চি গাউসকে দেখতে হবে। গাউসের এই চিন্তাটা এত বৈপ্লবিক ছিল যে পিচ্চি গাউসের চিন্তা ব্যবহার করেই আমরা সমান্তর ধারার সমষ্টি বের করি। চলো অতীতকে রোমন্থন করি –

 

গাউসের দুষ্টুমি আর বিপ্লবী ধারণা

 

একদিন গাউস ক্লাসে বসে দুষ্টুমি করছে। তার স্যার বার্টনার চরম বিরক্ত হয়ে গেলেন। তিনি গাউসকে ডেকে বললেন, এই তুই ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সবগুলো সংখ্যা যোগ করে নিয়ে আয়।

বার্টনার সাহেব এতোক্ষণ ক্লাস নিতে থাকলেন। পাঁচ মিনিট না যেতেই বার্টনার সাহেব দেখলেন গাউস আবারও দুষ্টুমি করছে।

তিনি আবারও গাউসকে ডেকে বললেন, এই তোকে না অঙ্ক করতে দিয়েছি, করেছিস?

গাউস বললো, জ্বি স্যার।

খাতা নিয়ে আয়, খাতা দেখি।

খাতা দেখার পর বার্টনার সাহেব পুরো অবাক হয়ে গেলেন। এইছেলে দেখি ঠিকই যোগ করে ফেলেছে। আর উত্তরও লেখা ৫০৫০! কিন্তু এতো অল্প সময়ে কিভাবে এই কাজ করলো গাউস?

 

 গাউস যা করলেন –

                 ১+২+৩+......৯৮+৯৯+১০০

 

পুরো ধারাটা তো এমন। এখন গাউস যদি এক যোগ দুই যোগ তিন যোগ…. এভাবে করে যেতেন তাহলে তার অনেক সময় লেগে যেত আর কষ্টও হতো অনেক। তাই এই যোগফলটা বের করার জন্য তিনি সামনে থেকে প্রথম সংখ্যা ১ আর উল্ট দিক থেকে প্রথম সংখ্যা ১০০ যোগ করলেন। পাওয়া গেল ১০১। আবার সামনে থেকে দ্বিতীয় সংখ্যা ২ আর উল্ট দিক থেকে দ্বিতীয় সংখ্যা ৯৯ যোগ করলেন পেলেন ১০১। এভাবে জোড়া জোড়া করে যোগ করলে তিনি নতুন একটা রাশি পান সেটা হলো ১০১+১০১+১০১+...১০১ এমন করে ৫০টা ১০১ যোগ করলে তিনি ১+২+৩+....+৯৯+১০০ এর যোগফল পেয়ে যাবেন। গাউস ১+২+৩+... এভাবে করলে সেটা অনেক কষ্ট হতো। তিনি ঐ যোগটাকে যখন

 ১০১+১০১+১০১+......+১০১

এভাবে ৫০টা ১০১ এর মাধ্যমে প্রকাশ করলেন, তখন যোগফলটা অনেক সহজ হয়ে গেল। একটা সংখ্যা যখন বারবার যোগ হয় তখন সেটাকে গুণের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যেমন ২+২+২ মানে হলো ৩×২। তাই গাউস ঐ ৫০ টা ১০১ কে আলাদাভাবে যোগ না করে তিনি ১০১ এর সাথে ৫০ গুণ করে দেন। পান ৫০৫০। এই গুণ করাটাও অনেক সহজ। তিনি প্রথমে ১০০ দিয়ে ৫০ কে গুণ দিলেন পেলেন ৫০০০। তারপর ১ কে ৫০ দিয়ে গুণ করলেন পেলেন ৫০। যেহেতু ১০০+১=১০১। তাই গাউস ১০০×৫০=৫০০০ এর সাথে ৫০×১=৫০ যোগ করে দিলেন পেলেন ৫০৫০ {৫০(১০০+১)} বা (৫০০০+৫০)।

 

এখন একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়! গাউস কেন এই রাস্তায় হাঁটলেন, অন্য রাস্তায় কেন না? গাউস যেটা চেয়েছেন সংখ্যাগুলোর মধ্যে এমনভাবে সম্পর্ক করতে যাতে প্রতিটা জোড়ায় মান সমান হয়।  যোগ এর ক্ষেত্রে ২+৩+৫ যে কথা ৫+২+৩ একই কথা। এখন এভাবে যদি বড়ো যোগ করতে দেওয়া হয় তাহলে পুরোটা যোগ করা অনেক সময়ের আর পরিশ্রমের ব্যাপার (গণিতের প্রাথমিক যুগে গণিতবীদদের এমন অনেক কষ্ট করতে হয়েছে)। তাই যদি বুদ্ধি করে সবকটাকে একত্রে যোগ না করে যদি এমনভাবে যোগ করা যায় যাতে সবগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যোগফলের(জোড়া জোড়া আকারে) মান একই হয় তাহলে কিন্তু খুব সহজে গুণের মাধ্যমে হিসাব করা যায়। গাউস সেটাই করেছেন। যদি জোড়াগুলোর মান ভিন্ন হতো তাহলে কিন্তু এই পদ্ধতি কাজ করতো না। আর গাউসের এই চিন্তার মাধ্যমে গণিতের আরেকটা সুন্দর বিষয়ের পরিচয় পাওয়া যায় সেটা হলো "সংখ্যাতত্ত্ব"! সেই ছোট্টবেলায় গাউসের চিন্তায় সংখ্যাতত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায় এটা কোনো সাধারণ বিষয় না!

এই ধারণাটা থেকেই আমরা সমান্তর ধারার সমষ্টি বের করতে পারি। কিন্তু তার জন্য দরকার বীজগাণিতিক রূপ!


মূল সমষ্টিতে প্রবেশঃ-

 

গাউস যেভাবে ১+২+৩+৪+... এই ধারার ১০০টা পদের সমষ্টি বের করেছে যেকোনো সমান্তরধারার সমষ্টি  এই পদ্ধতিতে বের করা যাবে। কিন্তু তার জন্য " সংখ্যাতত্ত্ব"র ধারণাটা মাথায় রাখতে হবে।

যোগ তো আমরা যেকোনোভাবেই করতে পারি, কিন্তু আমরা যদি একটু বুদ্ধিখাটিয়ে যোগ করে যোগফলগুলোকে একটা নির্দিষ্ট নিয়মে (গুণে) প্রকাশ করতে পারি, তাহলে যোগটা সহজ হয়ে যাবে।

 

যেহেতু আমরা সমান্তর ধারার সমষ্টি বের করব, তাই ধারার বীজগাণিতিক রূপ (যেটা উপরে দেখেছি) রূপটা নিয়ে এনালাইসিস করতে হবে।


a+(a+d)+(a+2d)+(a+3d)+....+(p-2d)+(p-d)+p     [কেন ফর্মটা এমন হলো ভাবো, খুবই সহজ আইডিয়া]

মনে কর,  এখানে n টা পদ আছে, যাদের যোগফল আমি বের করব । এখানে p মানে শেষ পদ। শেষ পদের আগের পদ তাহলে কি হবে? (p-d)। তার আগেরটা (p-2d)। এই পর্যন্ত বুঝে থাকলে সমষ্টির দিকে আগাই । যেহেতু গুণ করব, তাই একটু বুদ্ধি খাটাই গাউসের মতো।

 প্রথম পদ + শেষ পদ = p+a

 প্রথম পদের পরের পদ + শেষ পদের আগের পদ = a+d+p-d = p+a

প্রথম থেকে তৃতীয় পদ + শেষ থেকে তৃতীয় পদ = a+2d+p-2d = p+a

..............................

এমন করে যতটা যতটা পদ থাকবে তার অর্ধেক জোড়া বানানো যাবে। তাহলে আবার গুণের নিয়মটা প্রয়োগ করে ফেলি।

যেহেতু n টা p+a আছে তাই তাদের যোগফল হবে, {n×(a+p)}÷2


এখন দ্রুত নিচের দুইটা প্রশ্ন সমাধান করে ফেলো,

 ০১. ৫+১০+১৫+....+১০০+১০৫+১১০ = ?

০২.  ২+৪+৬+৮+...... এই ধারার ১ম ৫৫ টি পদের যোগফল কত?



নির্দেশনাঃ- 



১.

চলো প্রথমটার যোগফল কিভাবে বের করব তা দেখাই,

আমাদের জানা সবকিছু এখানে আছে, প্রথম পদ, শেষ পদ, সাধারণ অন্তর । শুধু একটা জিনিস জানি না, কয়টা পদ আছে এখানে । সেটা আমি বের করতে পারব। কিভাবে? দেখ, আমি কিন্তু জানি n তম পদের সূত্র। যেহেতু আমি এই ধারার শেষ পদটা জানি। তাই n তম পদের সূত্র দিয়ে আমি কয়টা পদ আছে তা বের করতে পারব। 


a + (n-1)d = ১১০

বা, ৫ + (n-1)৫ = ১১০  [সাধারণ অন্তর ৫]


এখন কয়টা পদ আছে তা বের করে সমাধান কর। যদি পদ সংখ্যা বিজোড় হয় তাহলে যেটা করবে সেটা হলোঃ- 

১. শেষ পদের সাথে সাধারণ অন্তর যোগ করে একটা পদ বাড়াবে, তারপর সমষ্টি থেকে তা বিয়োগ দিবে। 

২. প্রথম পদের থেকে সাধারণ অন্তর বিয়োগ দিয়ে আরেকটা পদ বানাবা, যেটা থাকবে একবারে শুরুতে। তারপর সমষ্টি থেকে তা বিয়োগ দিবে। 


দুই নাম্বার পথটাই সহজ বেশি। 



২.

এখানে, শেষ পদ কত নাম্বার তা বলা আছে, তাহলে আমাদের আগে পদটা বের করতে হবে। তারপর সমষ্টি। তো দ্রুত করে ফেল। আর যদি তুমি এটা সফল ভাবে করতে পারো, তাহলে পাঠ্য বইয়ের 

(n÷2) × {2a + (n-1)d} এই সূত্রটা বুঝতে পারবে। কারণ এটা (n÷2) × (a+p)  এর সম্প্রসারিত বা এক্সটেন্ডেড রূপ! এখানে p এর মান বের হবে যোগ করে দেয়া হয়েছে। বিশ্বাস না হলে নিজেই একটু চেষ্টা করে দেখো! 



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- 


“যদি কেউ গুণোত্তর ধারার প্রথম n তম পদের সমষ্টির এমন সাধারণ রূপ বা অনুভব করার মতো রূপ/প্রমাণ জেনে থাকেন অনুগ্রহ করে আমাকে জানাবেন"






Oyahidur Rahman Mohin

I am Mohin. Reading, writing and thinking are my passion. I usually write fiction and non-fiction for pleasure. And I am trying to touch the tune of life. "Life is really very simple but we insist on making it complicated."

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম