নিঃসঙ্গ নিউটন ও তার অদ্ভুত দর্শন

•নিউটন কেন সর্বকালের সেরা?

 ১৬৬৫ সাল, পুরো বিশ্বটা মহামারীতে আক্রান্ত। এই ভয়াবহ মহামারীর কারণ হলো ছোট ছোট ইদুর, যার কামড়ে হয় প্লেগ!

কত কত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। এই সময় নিউটন নামে এক তরুণ ছাত্র ট্রিনিটি  কলেজ থেকে ফিরে আসে তার গ্রামে। কিছুদিন আগেই এই ছেলেটা বলবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছে, দ্বিপদী উপপাদ্যকে নতুন রূপ দিয়েছে। আর বলবিদ্যাকে ব্যাখ্যা করার জন্য যখন তার হাতে কোনো গণিত নেই, তখন নিজেই গণিতের প্রতিষ্ঠা করেছে। আর তার নামই "স্যার আইজ্যাক নিউটন"। 


নিউটনের বিখ্যাত বই, Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica। এই বইয়ের জন্মের কাহিনীও ছিল নিষ্ঠুর! নিউটন যখন রয়েল সোসাইটির সদস্য হন তখন রয়েল সোসাইটির হেড ছিলেন রবার্ট হুক। তিনি ছিলেন খুব ঈর্ষাকাতর এবং স্বার্থপর মানুষ। আমরা সবাই তার ঐ সূত্রটা জানি, "স্থীতিস্থাপক সীমার ভিতর পীড়ন বিকৃতির সমানুপাতিক"। কিন্তু এই সূত্রের পিছনের ইতিহাসটা খুবই করুণ। রবার্ট হুক এই সূত্রটা বিজ্ঞান মহলে একটা এনক্রিপশন বা ধাঁধার মতো ছড়িয়ে দেন হুক। কিছু অর্থপূর্ণ শব্দের সাথে অর্থহীন শব্দের গোজামিল দিয়ে এই ধাঁধা তৈরি করেন। আর এই জন্য বিজ্ঞানীরা তাদের ১৮ বছর নষ্ট করে ধাঁধার সমাধান বের করতে করতে। যখন সূত্র পুরোপুরি হুকের নামে চালু হয়, তখন তিনি সত্যটা সামনে আনেন। 


নিউটন তার একটা করে আবিষ্কার যখন হুকের সামনে হাজির করে হুক তাকে ব্যাঙ্গ করে বলে, " এইটা তো আমি জানি, নতুন করে বলার কি আছে"। নিউটনের প্রতিটা আবিষ্কারকে যখন হুক ব্যাঙ্গ করে তখন তার মেন্টাল ব্রেকডাউন ঘটে। সে পুরো হতাশ হয়ে পড়েন। তখন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে বলেন একটা একটা করে আবিষ্কার হুককে না দেখিয়ে সবগুলো একত্রে বই আকারে সাজাতে। তখন অবশ্যি হুক বলতে পারবেন না, সব তার জানা। আর এভাবেই হুকের ঈর্ষাকাতরতা থেকে বাঁচতে "প্রিন্সিপিয়া অফ ম্যাথম্যাটিকা" র জন্ম। তবে এই বৈপ্লবিক বইটি নিউটন প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলেন। কিভাবে তা পুন:রোদ্ধার করেন সেই গল্প জানতে পরিশিষ্ট-৩ ঘুরে আসতে পারেন।


 নিউটনের চিন্তাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো, মহাকর্ষ! আপেল পড়া থেকে এত এত যুগান্তরকারী ধারণা তিনি দিয়ে ফেললেন। তার সবচেয়ে যুগান্তকারী চিন্তা ছিল, "যেই আকর্ষণের কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো বস্তু নিচে পড়ে সেই একই কারণে চাঁদ পৃথিবী কিংবা পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে"- এই বিবৃতিটুকু। কারণ তখন সর্বত্র ছিল অ্যারিস্টটলের জয়জয়কার। আর তিনি বলেছিলেন, চাঁদের ঘূর্ণন ও পৃথিবী পৃষ্ঠে বস্তুর নীচে পড়া একই ঘটনা না! কারণ চাঁদ স্বর্গীয় বস্তু।নিউটন সর্বপ্রথম এই ধারণার বিপরীতে গাণিতিক যুক্তি দেন। 

  

•দ্বিপদী উপপাদ্যের ভাবনা


নিউটনের সবচেয়ে অবহেলিত কাজগুলোর একটা হচ্ছে " দ্বিপদী উপপাদ্য"। নিউটনের আগে এই উপপাদ্য নিয়ে অনেকেই কাজ করেছে। নিউটন সেই উপপাদ্যকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে। দ্বিপদী বিস্তৃতী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ব্লেস প্যাসকেল দ্বিপদী বিস্তৃতীর সহগগুলোকে  একটা ত্রিভুজে রূপ দেন। কিন্তু এইভাবে কাজ করাটা অনেক সময় ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। 



প্যাসকেলের ত্রিভুজটা হলো-

                           1

                        1    1

                     1    2    1

                  1    3     3    1

              1    4     6     4    1

        ………………………….. 


এই ত্রিভুজটি কাজ করে মূলত সহগ নিয়ে। এর প্রাথম সারিটা হলো শূন্য ঘাতের সহগের, তারপরের সারিটা একঘাতের সহগ। এই সহগগুলো ১,১। কারণ (a+b)^1=a+b। মানে যা আছে তাই। এইজন্য ১,১। এরপর ধীরে ধীরে দুই ঘাত, তিন ঘাত,চার ঘাত, পাঁচ ঘাতের সহগ। আমি চার ঘাত পর্যন্তই লিখেছি।  নিচের চিত্রে ২৫ টা সারি দেখানো, এভাবে চলমান একটা ত্রিভুজ এটা।



এর বৈশিষ্ট্য হলো,  এটার দুই ধারে সবসময় ১ হবে। কারণ দ্বিপদী উপপাদ্য অ্যানালাইসিস পড়লেই বোঝা যাবে কিছুক্ষণ পর। এছাড়াও এখানে পাশাপাশি  ২ টা সহগ যোগ করে নিচে বসালেই পরের ঘাতের সহগ হয়ে যায়। যেমন–

১+১=২ এটা হলো দ্বিতীয় ঘাতের সহগ। 

১+২=৩, ১+২=৩; তৃতীয় ঘাতের সহগ। 

১+৩=৪, ৩+৩=৬, ৩+১=৪; এগুলো চতুর্থ ঘাতের সহগ।  এভাবে চলতেই থাকবে। এই কারণটা ছোট্ট সংলাপের মাধ্যমের পরিশিষ্ট-১ এ বলা হয়েছে।


 দ্বিপদী বিস্তৃতি করার ক্ষেত্রে মূল সমস্যাই ছিল প্রতি ঘাতের সহগের জন্য আগের সহগ জানতে হচ্ছে। তাই এটা বড় কোন ঘাতে অনেক কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। আর তাই এটাকে জেনারালাইড করা খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়লো।


নিউটনের কৃতিত্ব হলো এই ঘটনাটাকে জেনারালাইজড করা। তিনি তার উপপাদ্যে দ্বিপদী বিস্তৃতীর সহগগুলোকে সমাবেশের মাধ্যমে প্রকাশ করলেন। আর দ্বিপদী বিস্তৃতীকে পূর্ণতা দিলেন। কিভাবে তা কিছু বৈশিষ্ট্য দেখলেই বোঝা যাবে।যেমন, গণিতবিদরা দ্বিপদী বিস্তৃতীর কয়েকটা বৈশিষ্ট্য আগে থেকেই জানতেন। এর মধ্যে একটা হলো যদি পদ দুইটাকে a ও b ধরি। তাহলে a এর ঘাত  বাড়তে থাকলে b এর ঘাত  কমে আবার a এর ঘাত কমলে b এর ঘাত বাড়ে। এটা আসলে বিস্তৃতী থেকেই বোঝা যায়ঃ 

(a+b)0= 1

(a+b)1= a+b

(a+b)2= a2 + 2ab + b2

(a+b)3= a3 + 3a2b+3ab2+b3

(a+b)4= a4+ 4a3b+ 6a2b2+

              4ab3+ a4

এখান থেকে দেখা যায়, a এর ঘাত বাড়লে b এর ঘাত কমে। আবার  b এর ঘাত বাড়লে a এর ঘাত কমে। এখান থেকে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। 

রাশিটার ঘাত যখন ৩ তখন বিস্তৃতীতে  রাশির পদসংখ্যা ৪। যখন ঘাত ৪ বিস্তৃতীতে পদসংখ্যা ৫। মানে ঘাত যত পদসংখ্যা তার চেয়ে ১ বেশি। তাহলে এটাকে বীজগাণিতিকভাবে লেখা যায়, ঘাত n হলে পদসংখ্যা n+1 টি হবে। 

আবার বীজগাণিতিক রূপ থেকে আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করা যায় যে, ঘাতের সহগগুলো যেই প্যাটার্নে বাড়তে থাকে নির্দিষ্ট একটা সংখ্যায় গিয়ে ঠিক সেইভাবে কমতে থাকে। 


তাহলে যদি আমরা কোন দ্বিপদী রাশি বিস্তৃত করতে যাই তাহলে আমাদের শুধু সহগ নির্ণয় করতে হবে। আর রাশি দুটো কিভাবে বসবে সেটা তো বৈশিষ্ট্য থেকেই দেখা গেল। a এর ঘাত  বাড়তে থাকলে b এর ঘাত কমে আবার a এর ঘাত কমলে b এর ঘাত  বাড়ে। 

কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, উপরে যে সূত্রগুলো দেখলাম এগুলো কিভাবে এলো? এটা খুবই সহজ। (a+b)2 মানে ২ বার a+b গুণ করলেই সূত্র পেয়ে যাব। ৩ বার গুণ করলে ঘনের সূত্র, চারবার গুণ করলে চার ঘাতের সূত্র পেয়ে যাব। এখন কি বোঝা যাচ্ছে কেন দ্বিপদী বিস্তৃতীর জন্য একটা উপপাদ্য দরকার?  কারণ যদি ঘাত হয় ১০ তাহলে ১০ বার গুণ করলে আমরা সূত্র পাব। কিংবা ৯ এর ঘাতের সূত্র বের করে সেটার সাথে   a+b গুণ দিলেই হবে। কি কষ্টসাধ্য ব্যাপার! 

নিউটন সহগগুলোকে প্রকাশ করেছেন, সমাবেশের মাধ্যমে। সেটা কিভাবে? 

(a+b)5 এটাকে বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে সমাবেশের ধারণাটা হলো মনে কর, ৫ টা ঝুড়ি আছে যেখানে ১টা a আর ১টা  b আছে। এখন আমি প্রতিটা ঝুড়ি থেকে একটা করে উপাদান তুলে দেখব আমি কি রাশি পেলাম আর সেই রাশিগুলো কতবার পেতে পারি। আমি ঝুড়িগুলোকে এভাবে সাজাই–

১.(a+b)

২.(a+b)

৩.(a+b)

৪.(a+b)

৫.(a+b)

এখন চিন্তা করেন, আমি যদি ৫টা a নিতে চাই। তাহলে আমি ১ বারই নিতে পারব। সমাবেশের ভাষায় 5C0 উপায়ে। ৫ টা b নিতে চাইলেও ১ বারই নিতে পারব। 


যদি আমি চিন্তা করি যে, আমি এমনভাবে উপাদানগুলো তুলব। যাতে সেই রাশিতে অন্তত ১টা b থাকে। সেটা নেওয়া যাবে 5C1 উপায়ে। 


আবার যদি চাই ২টা b রাখতে সেটা নেওয়া যাবে ১০ বার। যেমন 

(১,২);(১,৩);(১,৪);(১,৫)

(২,৩);(২,৪);(২,৫)

(৩,৪);(৩,৫)

(৪,৫)


৩টা b নেওয়া যাবে ১০ বার, ৪টা b নেওয়া যাবে ৫ বার। 

এখানে কৌশলটা কি ধরতে পারছেন? আমরা জানি a এর ঘাত বাড়তে থাকলে b এর ঘাত কমে আবার a এর ঘাত কমলে b এর ঘাত বাড়ে। তাই আমি আগে b এর ঘাত প্রথম ০ ধরে, আস্তে আস্তে b এর ঘাত বাড়িয়েছি। যাতে বিস্তৃতীর সাথে মিল থাকে। এভাবে সবগুলো সমাবেশ করলে আমরা সহগসহ বিভিন্ন পদ পেয়ে যাব। সেটা হবে। 

 (a+b)5

=a5+ 5a4b+ 10a3b3+ 10a2b3+ 5ab5+ b5

=(5C0) a5+ (5C1) a4b+ (5C2)

a3b2+ (5C3) a2b3 +(5C4) ab4 + (5C5) b5


এখন এটাকে যদি বীজগাণিতিক রূপ দেই তাহলেই দ্বিপদী উপপাদ্য পাওয়া যাবে। 

(a+b)n

=an +nC1 a(n-1)b +nC2 a(n-2)b2 +.......+ bn


এভাবে যখন দ্বিপদী উপপাদ্যকে ব্যাখ্যা করা গেল তখন আর কোন সমস্যা থাকল না। এভাবে ব্যাখ্যা করার আকেরটা মজার দিকও আছে। এভাবে ব্যাখ্যা করলে আমরা বিস্তৃতি ছাড়াই একটা ঘাতের বিস্তৃতির নির্দিষ্ট পদ বের করতে পারব! (সেটা পরিশিষ্ট-২ এ ব্যাখ্যা করা আছে।)

মজার ব্যাপার হলো, নিউটন হলেন ক্যালকুলাসের একজন জনক।আর ক্যালকুলাসের একটা বিশেষ ধারা হলো ম্যাকলরনির ধারা। এই ম্যাকলরনির ধারা নির্দিষ্ট কিছু নিয়মে দ্বিপদী উপপাদ্যতে রূপ নেয়! যেই উপপাদ্যের জন্য কী দুর্ভোগই না ভোগ করলেন বেচারা নিউটন।


•চতুর্মাত্রিক কাঠামোর ধারণা 


 এই লেখাটার মূল উদ্দেশ্য দ্বিপদী বিস্তৃতি ও এর পিছনের সুন্দর চিন্তাগুলোর একটা আভাস দেওয়া। তার প্রেক্ষিতে এটাও প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক কি প্রয়োজন এই দ্বিপদী উপাদ্যের বা এই বিস্তৃতি দিয়ে কি করে? 

গণিত নিয়ে জি. এইচ হার্ডি বলেন–


"যা মানুষের প্রয়োজনীয় বা দরকারি তা গৌণ গণিত। এর বিপরীতে যা জ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে সংযুক্ত করে, যা গুরুত্বপূর্ণ ধারণাকে সংযুক্ত করতে পারে, সর্বোপরি যা একজন খাঁটি গণিতবিদকে আনন্দ দেয় তাই উচ্চতর গণিত"

মূল জায়গাটা হলো একটা নতুন ভাবনার খোরাক, তা যে সবসময় কাজে লাগতেই হবে তা মূল না। তবে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপদী বিস্তৃতীর প্রয়োগ আছে। যেমনঃ অর্থনীতিবিদরা প্রায়ই এই গণিতের দ্বারস্থ হন। আর্কিটেক্টরা বিভিন্ন ডিজাইন বানানোর সময় এই দ্বিপদী বিস্তৃতী ব্যবহার করে থাকেন। 


দ্বিপদী বিস্তৃতী নিয়ে অনেক গণিতবিদই ভাবতেন। এর মধ্যে ইউক্লিডের (এলিমেন্টস বর্তমানে যার নামে বহুল প্রচলিত) কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দুইটি সংখ্যার বর্গ নিয়ে তার এলিমেন্টসে জ্যামিতিক প্রমাণ করেছেন। যেটা (a+b)^2 এর সূত্রের জ্যামিতিক রূপ। তখন তো আর বীজগণিত ছিল না, তাই তিনি এই সূত্রকে একটা দ্বিমাত্রিক বর্গের সাথে চিন্তা করে কাজটা করেছেন। 


এই যে চিন্তাটা, এটা দিয়ে কিন্তু সুন্দর আরো কিছু চিন্তা করা যায়! 

যেমন, আমরা এই চিন্তার সূত্র ধরে অন্যান্য মাত্রার কাঠামো কেমন হবে সেটা চিন্তা করতে পারি। (a+b)^0 কে শূন্য মাত্রা (বিন্দু) হিসেবে চিন্তা করতে পারি, (a+b)^1 কে একমাত্রা(একটা রেখা) হিসেবে চিন্তা করতে পারি ,(a+b)^2 কে দ্বিমাত্রিক (যেমন ইউক্লিড চিন্তা করেছিলেন, দ্বিমাত্রা হবে শুধু একটা সার্ফেস। এটার কোনো উচ্চতা হবে না।)হিসেবে ভাবতে পারি, (a+b)^3 ত্রিমাত্রিক(আমাদের পরিচিত জগৎ) ধরতে পারি।  (a+b)^4 কে? এখানেই আসলে মজা। এটাকে আমরা ভাবতে পারি চতুর্মাত্রিক কাঠামো হিসেবে হিসাবে! সাধারণত কোনো প্রাণী যেই মাত্রায় বসবাস করে সে তার উপরের মাত্রা সম্পর্কে সে চিন্তা করতে পারে না। দ্বিমাত্রিক প্রাণী যদি থাকত তাহলে তারা আমাদের সম্পর্কে ঠিকঠিক চিন্তা করতে পারত না। আর গণিতের মাহত্ম এখানেই। আমরা আমাদের উপরের মাত্রার কাঠামো সম্পর্কে চিন্তা করতে পারছি। তাহলে দেখুন চতুর্মাত্রিক কাঠামো কেমন হয়– 

আমরা এই কল্পনাটা করবো বিন্দু দিয়ে। কেউ চাইলে কোণ দিয়েও করতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে চিন্তাটা যেনো শুধু কোণ দিয়ে হয়। হ-য-ব-র-ল না হয়ে যায়। আর আরেকটা কনফিউশান থাকতে পারে, সেটা হলো আইন্সটাইন তো বলেছেন, এই মহাবিশ্ব চতুর্মাত্রিক তাহলে কেন আমরা চতুর্মাত্রা নিয়ে চিন্তা করতে পারব না। আইন্সটাইন আমাদের যেই ত্রিমাত্রিক কাঠামো দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতা এটাকে কিন্তু চতুর্মাত্রিক বলেন নি। তিনি এই কাঠামোর সাথে যোগ করেছেন সময়। তাই চতুর্মাত্রিক বলেছেন। কেন সময়?  কারণ আজকে আমি যেই ঘরে বসে লিখছি কয়েক বছর পর এর অস্তিত্ব নাই থাকতে পারে, কিংবা হয়তো অতীতে এর অস্তিত্ব ছিল না। এখন আছে। এইভাবে চিহ্নিত করার জন্য সময় ধরেছেন। 

আমরা এখন চতুর্থ মাত্রার সন্ধান করি–


আমরা জানি যে একটা বিন্দু দিয়ে বোঝায় শূন্য মাত্রা। কারণ এটা ডানে বামে উপরে কোথাও যেতে পারে না। এর জীবনের বৈচিত্র্য শেষ! 

আবার দুইটা বিন্দু যদি পাশাপাশি বসানো হয় তাহলে এক মাত্রায় থাকে দুইটা বিন্দু। (আমরা চিন্তা কিন্তু প্রান্ত বিন্দু দিয়ে করছি। সাবধান!)

একটা রেখার সাথে যদি আরো কয়েকটা রেখা লাগিয়ে দেই, তাহলে হয়ে যাবে দ্বিমাত্রিক তল। যেমন, বর্গ। আর সেখানে ৪টা প্রান্ত বিন্দু। 

ঐ বর্গটার উপরে যদি আরো কয়েকটা বর্গ রেখে দেই হয়ে যাবে ত্রিমাত্রিক কাঠামো। যার ৮ টা প্রান্ত বিন্দু। তাহলে চার মাত্রায়? 

পুরোচিত্রটা আবার দেখি,


শূন্য মাত্রা — ১ টা প্রান্তবিন্দু 

এক মাত্রা — ২ টা প্রান্তবিন্দু 

দ্বিমাত্রায় — ৪ টা প্রান্তবিন্দু 

ত্রিমাত্রায় — ৮ টা প্রান্তবিন্দু 


দেখুন মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে প্রান্তবিন্দু ২ এর গুণিতক আকারে বাড়ছে এটা 2^n  হিসেবে লেখা যায়। তাহলে চতুর্থ মাত্রার কাঠামোতে ১৬ টা প্রান্তবিন্দু থাকবে। আমরা যদি এমন কোনো কাঠামো আঁকতে পারে যাতে ১৬ টা প্রান্তবিন্দু তাহলে সেটা হবে চতুর্থ মাত্রার কাঠামো। দেখছেন, কিভাবে গণিত আমাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা দূর করেছে! অথচ আমরা পড়ে থাকি স্বার্থ আর লাভ নিয়ে। এখানে একটা বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার। আমরা আসলে ত্রিমাত্রিক জগতের উপরের জগৎ সম্পর্কে কিছু জানি না। কিন্তু আমরা সাধারণ ইউক্লিডীয় জ্যামিতি থেকে জানি যে কয়েকটা বিন্দুকে একত্র করলে একটা রেখা পাই, আবার কয়েকটা রেখাকে একত্র করলে পাই দ্বিমাত্রিক তল বা চতুর্ভুজ, কয়েকটা চতুর্ভুজকে একত্র করলে পাই ঘন এভাবে আমাদের সাধারণ জ্যামিতিক জ্ঞান থেকে অন্যান্য মাত্রার কাঠামো সম্পর্কে ধারণা নিতে পারি (সুনিশ্চিত হতে পারি না)।

কিন্তু গণিত না থাকলে আমরা এই ধারণাটাও পেতাম না। আর এটাই গণিতের মাহত্ম!


•সম্ভাবনাময় প্যাসকেলের ত্রিভুজ

আমরা তো এতক্ষণ দ্বিপদী উপপাদ্যের সুন্দর দিক দেখলাম। এখন দেখি প্যাসকেলের ত্রিভুজের  দিক,  সম্ভাবনার সাথে প্যাসকেলের ত্রিভুজের একটা সম্পর্ক। প্যাসকেলের ত্রিভুজ আসলে অনেক সুন্দর একটা শিল্পকর্ম! যেমন, 

                        ১

                     ১   

                 ১         ১

                 ৩           ১

          ১        ৬      ৪      ১

      ১     ৫    ১০    ১০    ৫      ১

   ১    ৬     ১৫    ২০   ১৫    ৬     ১

………………………………………


এতোটুকুতেই দেখি, এখানে একটা হকিস্টিকের নকশা আঁকা। যদি হকিস্টিকের হাতলটা ডান দিকে থাকে তাহলে ডান দিকের সব সংখ্যা গুলো যোগ করুন তারপর বাঁয়ে মোড় নিন। দেখবেন যোগফলগুলো মিলে গেছে।(নিচের চিত্র দ্রষ্টব্য) আর হকিস্টিকের হাতল যদি বাম থেকে হয় তাহলে ডানে মোড় নিন। কী, এগুলোও মিলে গেল! (বোঝার সুবিধার জন্য আমি হকিস্টিকের নকশার ভিতর সংখ্যাগুলো লাল রঙে লিখছি)। কিন্তু কেন? এর পিছনের কারণটা কি বলতে পারবেন? আমি একটু ক্লু দেই। এর সাথে পাশাপাশি দুইটা সংখ্যা যোগ করে পরবর্তী সংখ্যা পাওয়ার একটা যোগসূত্র আছে। আমি যেদিন প্রথম "যারা গণিত ভালোবাসে" বইয়ে এটা দেখেছিলাম। খুব অবাক হয়েছিলাম। আর এর পিছনের কারণ খোজার জন্যও চেষ্টা করেছি বহুদিন!



এখন সম্ভাবনার সাথে এর সম্পর্কটা দেখি। যখন আমরা কয়েন টস করি তখন হয়তো হেড পরবে, নাহলে টেল পড়বে। এই সম্ভাবনা ১/২। সম্ভাবনা মূলত সংখ্যার মাধ্যমে দেখানো হয়। যার রেঞ্জ থাকে ০ থেকে ১ এর মধ্যে। একবার কয়েন টস করেলে হেড আর টেল পড়ার সম্ভাবনা সমান।


যদি দুইবার টস করি তাহলে যেই ফলাফলগুলো আমরা পাব, সেটা হলো ২বার টেল, ২বার হেড, ১বার হেড অথবা ১বার টেল। তাহলে আমরা যেভাবে  ফলগুলো পাব। 

          HH,(HT,TH,),TT 

TH আর  HT কে ব্রাকেটে দেওয়ার কারণ দুইটা একই জিনিস বোঝায় ১বার হেড যা ১ বার টেলও তা। 


আমরা এই ফলাফলগুলোকে (সম্ভাবনার ভাষায় নমুনাক্ষেত্র) তাহলে লিখতে পারি, 


২বারই হেড পাব — ১ উপায়ে

১বার হেড অথবা টেল পাব — ২ উপায়ে

২বারই টেল পাব — ১ উপায়ে


এইটাকে ১,২,১ লেখা যায় এটাই প্যাসকেলের ত্রিভুজে দুইয়ের ঘাতের সহগ। দুইবার কয়েন টস করলে এটা পাওয়া যাবে। 


তিনবার কয়েন টস করলে পাওয়া যাবে,  ১,৩,৩,১।

কিভাবে এই সম্পর্কটা?  এটা হবে, দ্বিপদী রাশির  মতো। প্রথম ১ হলো ৩বারই হেড পাওয়ার উপায়। এভাবে একটা করে হেড কমবে আর একটা করে টেল বাড়বে। এভাবে নমুনা ক্ষেত্র পেয়ে গেলে আমরা সম্ভাবনা বের করতে পারি। সেই উপায়টা হলো নমুনাক্ষেত্র গুলো যোগ করে যেইটা আমরা চাই সেটার আর নমুনাক্ষেত্রের   অনুপাত।


সম্ভাবনা = যেটা আমরা চাই/নমুনাক্ষেত্রের যোগ ফল


যেমন দুবার টস করলে ১বার হেড অথবা টেল পাওয়ার সম্ভাবনা=২/৪ বা ১/২। 

এভাবে প্রায়ই আমরা দ্বিপদী বিস্তৃতী ব্যাবহার করতে পারি!


কোন ঘটনাই আসলে ব্যাখ্যাতীত না গাণিতিক এই বিষয়গুলোর মধ্যেও সুন্দর গণিত থাকে। কয়েন টসের ব্যাখ্যাটা হলো–


দ্বিপদী বিস্তৃতী কাজ করে মূলত দুইটা পদের রাশি ও তাদের ঘাত নিয়ে। নিউটনের দ্বিপদী উপপাদ্য ব্যাখার সময় সমাবেশের ঘটনা দেখেছিলাম। (a+b)^2 এর ব্যাখাটা হলো দুইটা ঝুড়ি আছে। যাদের মধ্যে আছে a ও b । তাহলে আমি দেখব কিভাবে আর কতভাবে আমি এদের থেকে উপাদান নিয়ে পদ তৈরি করতে পারি। যেমন আমি  a^2 বা ২ টা a পেতে পারি একবার, ১টা a  অথবা ১টা b মানে ab পেতে পারি ২বার, b^2 মানে ২টা b পেতে পারি ১ বার। দুইবার কয়েন টস করলে আমরা দুইটা হেড পেতে পারি ১ বার, ১টা হেড অথবা ১টা টেল পেতে পারি ২বার, ২টা টেল পেতে পারি ১ বার। সম্পর্কটা ধরতে পেরেছেন? এখানেও ঐ দ্বিপদী উপপাদ্যের মতো সমাবশের খেলা হচ্ছে, একটার ঘাত কমছে অন্যটা বাড়ছে। যেমন প্রথমে দুইটা হেড, তারপর একটা হেড কমল আরেকটা টেল বাড়ল, তারপর দুইটাই টেল। এভাবে নমুনাক্ষেত্র বের করে সম্ভাবনা বের করা যায়।


 কিন্তু কেন এই ঘটনাটা ঘটল?  এর কারণ হলো দ্বিপদী বিস্তৃতীতে দুইটা পদ নিয়ে কাজ হয়, আর এখানেও দুইটা নমুনাক্ষেত্র তাই সমাবেশের মাধ্যমে সহজে নমুনাক্ষেত্র পাওয়া গেল!

 

 সমস্যাঃ চারবার কয়েন টস করলে কি নমুনাক্ষেত্র পাওয়া যায় সেটা বের করে সেখান থেকে দুইটা হেড আর দুইটা টেল পাওয়ার সম্ভাবনা প্যাসকেলের ত্রিভুজ দিয়ে বের করবেন। (সমাধান করতে পারলে আনন্দ পাবে)


হকিস্টিক পদ্ধতির গণিতটাও বলে দেই, এই যে দেখুন আমি ১,৪,১০ পর্যন্ত এসে যখন বামে মোড় নিলাম, পেলাম ১৫ যা ঐ সংখ্যাগুলোর যোগফল। কিন্তু এর কারণ কি? এর কারণ প্যাসকেলের ত্রিভুজের অন্যন্য বৈশিষ্ট্য, পাশাপাশি দুটি সহগ যোগ করে পরের ঘাতের সহগ পাওয়া। আমরা যে ১০ পর্যন্ত এসেছি এগুলো কিন্তু পাশাপাশি দুটি সহগ যোগ করেই। তাই যখন বামে মোড় নিলাম পাওয়া গেল ১৫, এই ১৫  পাওয়া গেল ১০ আর ৫ যোগ করে। যেই ৫ পেয়েছি ১ + ৪ থেকে। তাই ১,৪,১০ পর্যন্ত এসে মোড় নেওয়ার পর পাওয়া ১৫, সেই পাশাপাশি সহগ যোগেরই ফল!


পরিশিষ্ট–০১

প্যাসকেলের ত্রিভুজে পাশাপাশি দুটি সহগ যোগ করলে নতুন সহগ পাওয়া যায়। এই ফর্মুলাটা কেন কাজ করে?

চলো স্বয়ং প্যাসকেল সাহেব থেকে জেনে নেই.....


: মহামতি প্যাসকেল, মহামতি

প্যাসকেল 

: এই তুই কে? তুই জানিস না আমার সময়ের কত দাম!  কি চাস?

:  না মানে ইয়ে, আপনার নামে যে ত্রিভুজ সেখানে পাশাপাশি দুটি সহগ যোগ করলে নতুন সহগ পাওয়া যায় কেন?

: ও আচ্ছা। ভিতরে আয়, তোদের মতো দু-চারটা কৌতূহলী ছাত্রদের আমার ভালো লাগে। খাতা-কলম নিয়ে আসি, বস এখানে।


: ত্রিভুজটা এমন :

                         1

                       1  1

                     1  2  1

                   1 3  3  1

তোর প্রশ্ন যে,এখানে 1+1 কেন হলো? 1-1 কেন হলো না। তাই তো?

: জি

: দেখ,ত্রিভুজের প্রথম সহগ 1। এটা বোঝায় (a+b)0=1,

কেন 1 হলো জানিস?

: জানি,কিন্তু বুঝি না।


:  বুঝতে হলে ভাবতে হবে।

 পাওয়ার 0 মানে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কিছু নেই। ডানে -বামে, উপরে - নিচে যাওয়া যাবে না, এমন জিনিস হলো বিন্দু। কিন্তু বিন্দুর তো একটা অস্তিত্ব আছে। সেটা প্রকাশ করা হয় 1 দিয়ে। বুঝতে পারছিস?

: জি।

: এখন পরেরটা দেখ 1, 1। এটা হলো a+b।এখানে a ও b এর সহগ 1। 

এখন (a+b)2 = (a+b)(a+b)।  

(a+b)(a+b)


= (1)a+(1)ab

         + (1)ab+(1)b

...................

   1a  +  2ab  + 1b [যোগ করে ]

এখন সহগ গুলো দেখ, প্রথম  লাইনে a এর সহগ 1, ab এর 1।

দ্বিতীয় লাইনে ab এর সহগ 1, b এর 1।

আরেকটি জিনিস দেখ,2য় লাইনটা কিন্তু একঘর ডানে সরিয়ে দিয়েছি। কারণ,

দুই লাইনের ab সমজাতীয় পদ। তাই ab এর নিচে ab আর b চলে গেল ডানে।


এখন  a এর সহগ 1, 1 ab ও 1 ab মিলে 2, b এর সহগ  1। এভাবে আরও কয়েকটা করলে দেখা যাবে প্রান্তীয় সহগ হবে 1। আর মাঝখানের সহগ হবে আগের যেই সহগ তাদের যোগফল। তাই লিখা হয় 

           1   1

        1   2   1

আরেকটা উদাহরণ দেই:

(a+b)3

=(a+b)(a+b)2

=(a+b)(a2 + 2ab + b2)


=a3 + 2a2b + ab2

          + a2b   +2ab2  

                              + b3

......................................

 a3+ 3a2b +3ab2 +b3

এখানে সহগ গুলো হলো 

          1  2   1

       1  3   3   1

বুঝতে পেরেছিস?


: জি, অনেক মজার জিনিস।


মহান প্যাসকেল এখন চলে যাবেন।



পরিশিষ্ট–০২

নিউটন সমাবেশের মাধ্যমে দ্বিপদী উপপাদ্যটা ব্যাখ্যা করে প্যাসকেলের ত্রুটি দূর করেছেন। এর সাথে তিনি আরেকটা মজার কাজ করেছেন। সেটা হলো সাধারণ পদ। মনে করো, যদি বলা হয় (a+b)10কে বিস্তৃত করলে এর ৫ নং পদটা কত হবে? [এখানে পদসংখ্যা হবে ১১টা, কারণ ঘাত ১০ তাই পদসংখ্যা ১০+১] 

তাহলে আমাদের ৫ টা পদ বিস্তৃত করে তারপর বলা লাগবে। কিন্তু একটা মজার উপায়ে সেই কাজটা করা যায় এক নিমিষেই। এর জন্য যেটা দরকার সেটা হলো কবিতা আবৃত্তি। তাহলে মনযোগ দেই–

(a+b)n

nC0 an b0+ nC1 a(n-1)b1+ nC2 a(n-2)b2+ nC3 a(n-3) b3+....+ nCn a(n-n)bn

এখন কবিতা আবৃত্তি করো পুরোটা। আবার করো। করা শেষ হলে মনোযোগ দিয়ে লেখাটা পড়বেন। এখানে প্রথম পদে nC0  ছিল তাই a এর ঘাত থেকে 0 বাদ গেছে b এর ঘাত হয়েছে 0। দ্বিতীয় পদে ছিল nC1 a এর ঘাত তাই 1 কমে হলো n-1, b এর ঘাত হলো 1, এভাবে চলতে চলতে শেষ পদে মানে n+1 তম পদে এসে nCn হলো a এর ঘাত হলো (n-n), b এর ঘাত হলো n । 

ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন? যত তম পদ nC[]এর সাথের সংখ্যাটা তার চেয়ে ১ কমেছে। a এর ঘাত থেকেও ১ কমেছে। আর nC[] এর সাথে যেই সংখ্যা হয়েছে  b এর ঘাত হয়েছে তত। 


এতটুকু বুঝতে পারলেই পাঠকের কাজ শেষ। বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দিন। 

এখন আমরা যেকোনো ঘাতের যেকোনো পদ নির্ণয়ের একটা বীজগাণিতিক রূপ দিব। তার জন্য ঐ আগের (a+b)n এর সূত্র ব্যাবহার করব। কারণ এটা দ্বিপদী উপপাদ্যের বীজগাণিতিক রূপ। 

এখন আমরা যদি যেকোনো ঘাতের বিস্তৃতীর যেকোনো পদ (ধরি r তম পদ) বের করতে চাই তাহলে সেটা হবেঃ- 


r তম পদ= nC(r-1) an-(r-1)b(r-1)


যেহেতু ধরেছি r তম পদ তাই সবজায়গায় ১ করে কমেছে। এটাকেই সাধারণ পদ বলা যেত কিন্তু অনেক মাইনাস সাইনের কারণে এটার বদলে r+1 তম পদকে সাধারণ পদ বলে। কারণ r+1 হলে মাইনাস আর প্লাস সাইন বাদ হয়ে সুন্দর রূপ হবে। আমি সেই রূপটা তুলে ধরছি। (পাঠক চাইলে বিস্তারিত অঙ্ক কষে দেখতে পারেন)।


সাধারণ পদ অর্থাৎ r+1 তম পদ 

= nCr a(n-r)br


সমস্যাঃ

১. (a+b)^20 এর বিস্তৃতীতে ১১ তম পদ কত?

২. (a+b)^11 এর বিস্তৃতীতে ১৩ তম পদ কত?

3.(a+b)^12 এর বিস্তৃতী করো প্যাসক্যালের ত্রিভুজের সাহায্যে। 



পরিশিষ্ঠ-৩: নিউটনের জীবনী হতে

প্লেগে ট্রিনিটি কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। নিউটন চলে এলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তার মনে অজস্র প্রশ্ন, সেইসব প্রশ্নের উত্তরও তার হাতে চলে আসছে। 

গভীর রাত মোমবাতির নিভু নিভু আলোয় নিউটন একমনে কাজ করে যাচ্ছেন। মোমবাতির আলোয় তার চোখগুলো ভয়ংকর মনে হচ্ছে। তার এতো বছরের সব জ্ঞান একত্রিত করছেন তিনি। তিনি তার ছোটবেলার ডায়েরিটা বের করলেন। সেখানে লেখা–

চাঁদ কেন পৃথিবীর গায়ে ছিটকে পড়ছে না? 

এর উত্তর নিউটন এখন ভালো করেই জানেন। প্রতিটা বস্তু একে অপরকে নিজের দিকে টানে। এই টানের কারণে বহু বছর ধরে চাঁদ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে পারে নি। তাই সে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। কিন্তু চাঁদ সবসময় এই মায়া ত্যাগ করে দূরে সরে যেতে চায়। তাই চাঁদ পৃথিবীর বুকে ধসে পড়ে না। আর পৃথিবী যতটুকু চাঁদকে টানে, চাঁদেও তত জোর পৃথিবীকে ছেড়ে যেতে চায়। তাই এই ঘূর্ণন তৈরি হয়। পৃথিবীর টানকে নিউটন নাম দিলেন অভিকর্ষ। নিউটন এখন এই বিষয় নিয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণা করছেন। আর সেগুলো লিখে রাখছেন খাতায়। খাতাটা তার কাছেই আছে।


নিউটন ডায়েরি উল্টালেন। সেখানে আরেকটা প্রশ্ন– 

রঙধনুর সাত রঙ কেন?

এই প্রশ্ন তাকে বহুদিন ভাবিয়েছে। এর উত্তরও স্পষ্ট। প্রতিটা আলো সাতটা রঙ দিয়ে তৈরি। আর সেই সাত রঙ সবসময় একত্রে থাকে। খন দেখা যায় সাদা। প্রচন্ড বৃষ্টির পর যখন রোদ ওঠে তখন সেই রোদের আলো মেঘের ভিতর দিয়ে গিয়ে সাতরঙে ভেঙে যায়। যাকে আমরা রংধনু বলি। 

নিউটন তার পায়ের কাছে তাকিয়ে দেখলেন তার পোষা কুকুরটা ঘোরাঘুরি করছে। তিনি আবারও কাজে মন দিলেন। হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ার আওয়াজ শুনে নিউটন ঘাবড়ে গেলেন। তিনি দরজা খুলতে যাওয়ার সময় ঘটল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি! ডায়মন্ড ছোটাছুটি করতে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল টেবিলের ওপর। আর মোমবাতির মলিন শিখায় জ্বলে উঠলো নিউটনের সব খাতা আর কাগজপত্র। নিউটন দৌড়ে এলেন, ততক্ষণে সব পুড়ে একাকার হয়ে গেছে। নিউটন বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে টেবিলে উপর তাকিয়ে দেখলেন, তারপর ডায়মন্ডকে কোলে তুলে বললেন, "ডায়মন্ড এটা তুমি কি করলে? তুমি কি জান তুমি আমার কত বড় ক্ষতি করেছো!"

এই খাতাটাই ছিল নিউটনের অমর কবিতা "প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা"। নিউটন পরবর্তী এক বছরে স্মৃতি রোমন্থন করে আবার লেখলেন সেই বইটি। আর বিজ্ঞান পিছিয়ে পড়ল এক বছর!


নিউটনের বদ স্বভাব হলো কোনো একটা সমস্যার সমাধান পেলে সিগারেট ধরানো। আজকে এই বদ লোকটার বিয়ে। সবাই চার্চে একত্রিত হয়েছে। বিয়ের কাজ শুরু হলো। যিনি বিয়ে পড়াচ্ছেন, নিউটনকে বললেন, মি.নিউটন আপনি কি এই বিবাহে রাজি আছেন? 

নিউটন মাথা নাড়ে বললেন, জ্বি আমি রাজি। 

তাহলে আপনার ফিওন্সকে আংটিটা পড়িয়ে দিন। মেয়েটা আংটি পড়ার জন্য আঙুল বাড়িয়ে দিল। আর সেইসময় নিউটনের মাথায় চলে এলো একটা সমস্যার সমাধান। আরকি! মেয়েটার আঙুলকে সিগারেট ভেবে জ্বালিয়ে দিলেন। সাথে সাথে মেয়ে রেগেমেগে বিয়ে দিল ভেঙে।*

*নিউটনকে নিয়ে প্রচলিত ঘটনা, সত্য নাও হতে পারে।


তথ্যসূত্রঃ-


বাস্তব সংখ্যা , দ্বিপদী উপপাদ্য ও ধারার যোগফল।


https://www.bbvaopenmind.com/en/science/leading-figures/hooke-the-genius-whose-big-mistake-was-confronting-newton/


https://youtube.com/playlist?list=PLxSt9YDBipm7HEXjMJ5EU_PAaJulr4koG


https://youtu.be/DmgdyscwJLI


https://youtu.be/JB4yj73Xrao


বই: বিজ্ঞানীদের কান্ডকারখানা-০১, রাগীব হাসান

বই: যারা গণিত ভালোবাসে, মুনির হাসান


ছবি: বিভিন্ন ওয়েবসাইট হয়ে নেওয়া, বিশেষ ক্রেডিট–অনামিকা ইসলাম অনামিকা


Oyahidur Rahman Mohin

I am Mohin. Reading, writing and thinking are my passion. I usually write fiction and non-fiction for pleasure. And I am trying to touch the tune of life. "Life is really very simple but we insist on making it complicated."

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম