শূন্য থেকে সরলরেখা

ঢাল দিয়ে শুরু 


ক্লাসের সবাই চুপচাপ বসে আছ, পুরো পিন ড্রপ সাইলেন্স। রাফি একটু অবাকই হচ্ছে– ফ্লোরে পিন পড়লে তো একটা টিং আওয়াজ হয়। এইটা আবার কেমন নিরবতা? 


এই ভাবতে গিয়ে তার হাত থেকে কলম পড়ে গেল। রাফি ভয়ে ভয়ে কলমটা তুলে দেখে রফিক স্যার তার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে!


স্যার হাতের বেতটা ঘুরাচ্ছেন, 

"রাফি, বাবা। তুমি কি করছিলে?"

"স্যার, কলমটা পড়ে গিয়েছিল…"

" বল তো, আমি এখন কি পড়াচ্ছি?"

"স্যার, সরলরেখার ঢাল।"


স্যার হাসি দিয়ে বললেন, "বল তো ঢাল কি?"

" স্যার, ঢাল হলো tanA। যেখানে A  কোণের মান।"

রাফি ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে। স্যার এখনো হাসছে নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু হবে! খুব ভয়ংকর! 


রাফি থতমত খেয়ে আবারও বলল, 

"স্যার, ঢাল হলো– y এর পরিবর্তন ÷ x এর পরিবর্তন।"


রাফি কিছু বোঝার আগেই রফিক স্যার তার মাথায় বাড়ি বসালো। রাফির মনে হলো, স্যারের হাতে কোনো লাঠি না, ধারালো ছুরি ছিল। 


রাফির ঘিলু চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। রাফির পাশে বসা ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে গেল। স্যার, এখনো রাফির মাথায় পিটাচ্ছেন আর বলছেন, দেখি তোর মাথায় কি আছে! কোনো ঘিলু তো নেই, আবার আমাকে ডিস্টার্ব করে। সাহস কত বড়!


স্যার চিৎকার দিয়ে বললেন, এই শাহেদ। এক গ্লাস লেবুর সরবত নিয়ে আয়। বেশি করে চিনি দিবি। 


শাহেদ দৌড়ে কোথা থেকে যেন লেবুর সরবত আনল। স্যার লেবুর সরবত হাতে নিয়ে রাফির ঘিলু সরবতে গুলিয়ে খেয়ে ফেলল। স্যারের জিহ্বটা কেমন লাল হয়ে 

গেছে। 


১.

রাফির প্রথম উত্তর ছিল, ঢাল মানে, tanA যেখানে A হলো কোণের মান। 

তারপর আবার বললো,  ঢাল হলো, y এর পরিবর্তন ÷ x এর পরিবর্তন 


তার দুইটা উত্তরই সঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন?


প্রতিটা সরলরেখাই তো সোজা।  তাই বলে সবই কি এক ধরনের? না, রেখাগুলোর মধ্যে কিছু রেখা বেশি খাড়া কিছু রেখা কম খাড়া। সরলরেখার এই বৈশিষ্ট্য, কোনটা কেমন (কতটুকু খাড়া) বোঝার জন্য ঢালের ধারণা আসল। কোনটা কতটুকু খাড়া সেটার ওপর ভিত্তি করে আমরা সরলরেখার বৈশিষ্ট্য বোঝতে

পারি। যেমন,

                    


AB, CD,  প্রত্যেকে একটা সরলরেখা। রেখা দুটি কি দেখতে একই রকম? না। AB, CD থেকে বেশি খাড়া। এখন শুধু খাড়া বললেই তো হবে না, মাপতেও হবে। কিন্তু কিভাবে মাপব? সেটা বুঝার জন্য, সরলরেখাকে অনুভব করতে হবে। সরলরেখা একটা নীতি মেনে চলে, সেটা হলো ভুজ আর কটির সম্পর্ক। তাই ঢাল বুঝতে হলে,  x (ভুজ) এর সাথে y (কটি) কতদ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে সেটা বুঝতে হবে। মূলত কতটুকু  খাড়া হবে সেটা নির্ভর করে সরল রেখার পরিবর্তনের উপর বা গাণিতিকভাবে, x এর সাপেক্ষে y এর পরিবর্তনের উপর।

তাই এই খাড়া মাপতে গেলে x এর সাথে y এর কতটুকু পরিবর্তন হচ্ছে বা কিভাবে  পরিবর্তিত হচ্ছে এটা মাপতে হবে। এখন মাপার জন্য যেটা আদর্শ ধরতে হয়,  সেটা হলো x এর মান 1 বৃদ্ধি পেলে y এর মান কতটুকু বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ একক মানে নিয়ে যেতে হবে।

 এখন প্রশ্ন হলো x এর মানের সাথে  y এর মানের বৃদ্ধি কিজন্য গণনা করছি? কারণ y হলো উলম্ব তল। উলম্ব তলের মান যত বাড়বে রেখাটা তত বেশি খাড়া হবে। যদি উলম্ব তলের মান কমে তবে রেখাটা খাড়া কমবে। জিনিসটা আরো ভালো করে বলি।y অক্ষে আমরা কি করি, উপরে নিচে যাই। x অক্ষের ক্ষেত্রে ডানে বামে যাই। রেখাটা যতটুকু উপরে উঠবে তত খাড়া হবে। আর রেখাটা যেহেতু x এবং y দুই অক্ষ দিয়েই যায়। তাই আমরা x এর মান বৃদ্ধির সাথে y এর মান বৃদ্ধির হিসেবে করি। এখন  y এর সাপেক্ষে x নিলে কি হয়?


যেহেতু কতটুকু খাড়া আমরা সেটার মান বের করব। কতটুকু ফ্লাট তার হিসাব করব না( কারণ আমি আমার ইচ্ছামতো কোনো রেখাকে বড় ছোট করতে পারি)। তাই x এর সাপেক্ষে y।


গাণিতিক স্টাইল:-

কোনো রেখার দুটি বিন্দুর ঢালটাই রেখার ঢাল হবে। কারণ বিন্দু দুটো রেখার অংশ।এখন গণিতের চোখে দেখব, কি হয় ব্যাপারটা।

ধরি, AB রেখার দুটি বিন্দু (2,3) ও (4,9)। 

xএর মান 2 বাড়লে y বাড়ে 6

x এর মান 1 বাড়লে y বাড়ে 6÷2=3 

ঢাল= x এর মান 1 বাড়লে y এর মান কতটুকু বাড়ে। 

তাই AB রেখার ঢাল 3।

মনে করি,অন্য একটি রেখার দুটি বিন্দু (x1,y1) ও (x2, y2)


x এর মান (x1-x2 )বৃদ্ধি পেলে y হয়(y1-y2)

xএর মান 1 বৃদ্ধি পেলে y হয় y1-y2 ÷ x1-x2


ঢাল= (y1-y2 ÷ x1-x2) এটা হলো ঢালের আদর্শ রূপ। কারণ এটা দিয়ে আমরা যেকোনো 2 বিন্দুর ঢাল বের করতে পারি।

পরিশিষ্ট:

 ঢাল=(y1-y2÷x1-x2)

 ঢাল= ডেলটা y ÷ ডেলটা x

যেহেতু y অক্ষ বরাবর লম্ব,x অক্ষ বরাবর ভূমি। তাই ঢাল = tanA 

আসলে, ঢালের প্রথম পরিচয় tanA না। এটা সর্বোশেষ পরিচয়, যেটা দিয়ে ঢালকে সম্পূর্ণ বোঝা যায় না! 




২.


এবারে আমরা ঢাল কত ধরনের হতে পারে সেটা দেখব। ঢাল মানে তো x এর সাপেক্ষে y এর পরিবর্তন।এই পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে ঢালটা কেমন হবে। 


চিত্রের দিকে তাকাই: 

2 নং চিত্রে রেখাটা উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এখানে আসলে কি ঘটছে। একটু ফোকাস করে দেখি। সরলরেখাটা তো চলমান, এই চলার সময় ভুজের মান যেমন বাড়ছে কটির মানও বাড়ছে। মানে হলো x অক্ষের দিকে যেমন রেখাটা এগুচ্ছে y অক্ষেও উপরে উঠছে। x এর মানও বাড়ছে y এর মানটাও বাড়ছে। যখন এভাবে রেখাটা যায় যে, x এর মানের সাথে y বাড়ে তখন রেখার ঢাল হয় positive বা ধনাত্মক। জিনিসটা গাণিতিকভাবেও সত্য, ধরি ২ টা বিন্দু (০,৮) আর (-৫,০)। এই রেখাটার ঢাল,

m=(৮÷০)÷{o-(-৫)} = ১.৬(ছবির রেখার সাথে এর সম্পর্ক নেই)। এখানে ঢালটা ধনাত্মক অর্থাৎ রেখাটা উপরে উঠছে।  কেউ যদি ঐ বিন্দু দুটি নিয়ে গ্রাফ আঁকে তাহলে দেখা যাবে, x অক্ষে এক একক এগুলে y অক্ষে ১.৬ একক উপরে উঠবে। দুই ঘর এগুলে ৩.২ ঘর উপরে উঠে। আসলে এটা দিয়ে ঢালকে অনুভব করা যায়। ঢালের প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা যে শিখছি এটা নিছক কোনো ভাবনা নয় বোঝা যায়।



এখন ছবির ১নং চিত্রে তাকাই, এখানে রেখাটা নিচে নেমে আসছে। কেন, সেটাও বোঝা যায়। সেখানে রেখাটা x এর দিকে যত এগুচ্ছে y অক্ষে তত নিচে নেমে যাচ্ছে। মানে ভুজের মানটা বাড়ছে কিন্তু কটির মানটা কমছে।এখন গণিতের সাক্ষী নিব, আবারও দুটি বিন্দু নেই (০,৮) আর (৫,০)। এই রেখাটার ঢাল,m=(৮-০)÷(০-৫) = -১.৬। এখানে ঢালটা ঋণাত্মক কারণ x আর y এর সম্পর্ক বিপরীত ধর্মী। এটাকেও যদি গ্রাফে আঁকা হয়, দেখা যাবে, (০,০) বিন্দুতে y এর মান ৮ একক। যদি ভুজের মান এক বাড়াই কটির মান ১.৬ একক কমে গেছে। ২ বাড়ালে কমে ৩.২ পরিমাণ। মানে ঢাল মানে হলো একক মানের জন্য কতটুকু রেখাটা কি পরিমাণে উঠছে বা নামছে। এখন ঢাল মাপার ক্ষেত্রে মাপা হয় রেখাটা কতটুকু খাড়া। কিন্তু ঋণাত্মক ঢাল হলে তো রেখাটা নোয়ানো থাকে। তাই আমরা বলি -১.৬। অর্থাৎ ১.৬ পরিমাণ নেমে যাচ্ছে, কারণ মাইনস চিহ্ন। 

এখন ছবির 4 নং কেস সলভ করি। সেখানে রেখাটা x অক্ষের সমান্তরাল। এই রেখায় আরিকটু ফোকাস করি, কি দেখা যায়? ওমা, এ তো অলসের অলস! একটু কাজও করে না। এই রেখায় ভুজের পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই কিন্তু কটি সবসময় এক। এটা খাড়া না তাই এর কোনো ঢাল নেই। গণিতও সেটাই বলে ডেলটা y = ০। মানে ঢাল ০। 



এবার 3 নং কেসটা দেখব। এই কেসটা খুবই সুন্দর। কিন্তু কেন?

3 নং কেসে কি ঘটছে দেখি,  সেখানে কটির পরিবর্তন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভুজের পরিবর্তন হচ্ছে না। 

গাণিতিক স্টাইল:-

ধরি একটা সরলরেখার দুইটা বিন্দু (5,3) ও (5,6)। ঐ সরলরেখার ঢাল,

m=(6-3)÷(5-5)=(3÷0)! এখন একটা মারাত্মক কাজ হয়ে গেছে। 3 কে আমরা 0 দিয়ে ভাগ করেছি। তাই ঢাল=অসংজ্ঞায়িত। 

এখন কেন অসংজ্ঞায়িত সেটার অনুসন্ধান করব।


অনুসন্ধানে গণিত:-

আমরা জানি, ঢাল,m=tanA। যেহেতু tan90° এর মান অসংজ্ঞায়িত তাই যে সরলরেখা y অক্ষের সমান্তরাল অর্থাৎ 90° তার ঢাল অসংজ্ঞায়িত। 


কিন্তু তবুও মন মানতে চায় না। আচ্ছা, তাহলে গ্রাফ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করি। y অক্ষের সমান্তরাল একটা রেখা কল্পনা কর। এখন এই রেখার পরিবর্তনটা একটু দেখি। দেখ এখানে x এর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কিন্তু y এর পরিবর্তন হচ্ছে। যদি এতটুকু সুন্দরভাবে বুঝতে পারো তাহলে জিনিসটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। মনে করি, রেখাটা শুধু x অক্ষের (3,0) বিন্দু দিয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো ঐ সরলরেখার ভুজের মান তো 3 কিন্তু কটির মানটা কি হবে? 

এই জায়গায় হলো সমস্যা হলো। 

একজন বলল, কটির মান 2। 

অন্যজন বলল, না, কটির মান 5। দুজনের মধ্যে তুমুল তর্ক। পরে তারা এক গণিতবিদের কাছে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কটির মান কতো। এখন গণিতবিদ জিনিসটা দেখলেন পরে বললেন, দেখ এখানে আমরা কটির মান জানি না। কারণ সরলরেখার একপ্রান্ত +infinity ও অন্য প্রান্ত-infinity এর দিকে চলে গেছে। তাই এই রেখার ঢাল অসীম বা অসংজ্ঞায়িত।

যখন একটা ফাংশনের মান ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অসীমে চলে যায় তখন আমরা বলি এই ইনপুটের বা ডোমেনের জন্য ফাংশনের মান অসংজ্ঞায়িত। সরলরেখার সমীকরণও একধরণের ফাংশন। যদি কোনো ক্ষেত্রে গ্রাফটা একটা মানের জন্য ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অসীমে চলে যায় তখনই সেটা অসংজ্ঞায়িত হয়। 

আসলে ফাংশনে একটা নিদিষ্ট ডোমেনের জন্য নিদিষ্ট রেন্জ পেতে হবে। যখন আমরা রেন্জের মান সমন্ধে নিশ্চিত হতে পারি না তখন সেটা হয় অসংজ্ঞায়িত। এখানেও আমরা y এর মান সম্পর্কে অনিশ্চিত তাই এই রেখার ঢাল অসংজ্ঞায়িত।


একটু মজা:- আচ্ছা, রেখাংশ তো সসীম। কিন্তু রেখাটা হচ্ছে অসীম।কেন?

সংখ্যারেখার ব্যাপারটা এমন, সংখ্যারেখার ডানে থাকে ধনাত্মক সংখ্যা আর বামে ঋণাত্মক। গণিতে অসীম সংখ্যক ধনাত্মক সংখ্যা আছে। কেউ যদি সসীম সংখ্যক ধনাত্মক সংখ্যা তবে সে বিপদে পরে যাবে। যদি সে চিন্তা করে সবচেয়ে বড় সংখ্যা কোনটি? ঋণাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রেও একই রকম, অসীম সংখ্যক ঋণাত্মক সংখ্যা। তাই সংখ্যারেখা চলমান রাখা হয়। বোঝানো হয় এখানে শেষ না, এটা অসীম পযর্ন্ত চলবে। আবার সংখ্যারেখায় 0 থেকে 1 যে ঘরটা সেটার কথা চিন্তা করো। ঐ ঘরে কয়টা সংখ্যা আছে। সেটাও অসীম সংখ্যক। অথচ 0 আর 1 এর ব্যবধান কিন্তু 1।


আর আমরা এতক্ষণ যে রেখার ঢাল নির্ণয় করেছি ঐ ধরণের রেখা নিয়ে চিন্তা করি।ধরি একটা রেখার সমীকরণ দেওয়া আছে, x+y=8। এটা দিয়ে কি বোঝায়? এটা দিয়ে এমন সকল ভুজ ও কটির সম্পর্ক বোঝায় যাদের যোগফল 8। যেমন, (1,7),(3,5),(-1,9) এমন অসংখ্য বিন্দু। এখন এই সমীকরণের গ্রাফ করলে দেখা যাবে রেখাটা উক্ত বিন্দু দিয়ে চলছে। যেহেতু এমন বিন্দু অসীম সংখ্যক। তাই আমরা দেখাই রেখাটা চলছে। 


আসলে গণিত বিষয়টি অনেক সুন্দর। শুধু একটু ভিন্নভাবে দেখতে হবে, চিন্তা করতে হবে!


বীজগণিতের দৃষ্টিপাত


১.

ফরাসি গণিতবিদ রেনে দেকার্তে একদিন উদাস মনে বসে আছেন। এমন সময় তিনি একটা মাছি দেখতে পেলেন। মাছিটা অনেকক্ষণ ওড়াউড়ি করে দেয়ালে বসল। দেকার্তে তখন চিন্তা করলেন, আচ্ছা এই মাছির অবস্থানটা কি আমি বের করতে পারি? দেকার্তে দেয়ালের দুই ধারের সাপেক্ষে মাছির অবস্থান বের করলেন। তিনি ভাবলেন, 

আচ্ছা মাছিটা দেয়ালের এই পাশ থেকে এতটুকুতে আছে। এখন যদি আমি এই পাশ থেকে ওপরে যেতে থাকি তাহলেই তো মাছিটাকে পেয়ে যাব। এভাবে যখন তিনি দুইটা অক্ষের সাপেক্ষে মাছির অবস্থান বের করলেন, তখনই স্থানাঙ্ক জ্যামিতির জন্ম হলো। তিনি জ্যামিতিক আকারকে বিন্দুর মাধ্যমে প্রকাশ করলেন, এভাবে স্থানাঙ্ক জ্যামিতির উদ্ভব ঘটল। এভাবে ভূজ আর কোটি দিয়ে প্রকাশ করা গেল একটা বিন্দু, জ্যামিতিক চিত্র। 


এই কাজটা করার পর দেকার্তে চিন্তা করলেন, আমি কি ফাংশনের চিত্র আকতে পারি? তখন তিনি ফাংশনের ইনপুটগুলোকে (ডোমেন) ভূজ আর আউটপুটগুলোকে (রেঞ্জ) কোটি ধরে জ্যামিতিক চিত্র আঁকতে পারলেন। এই জিনিসটা আসলেই একটা দারুণ ব্যাপার ছিল। 

এই কাজটা থেকে আমরা একটা সুন্দর চিন্তা করতে পারি। যদি ভূজ আর কোটির মাধ্যমে ফাংশনের চিত্র আঁকা যায়। তাহলে কোনো চিত্র থেকে যদি আমরা বিভিন্ন কিছু বিন্দু নিই, তারপর সেই বিন্দুগুলো থেকে ফাংশন বের করতে পারি, তখন সেই ফাংশনটা আসলে ওই চিত্রের সমীকরণ হয়ে যাবে। কী সুন্দর একটা বিষয়! 


মনে করো, আমার কাছে একটা চিত্রের কিছু বিন্দু আছে। চিত্রটা হলো বৃত্ত। বিন্দুগুলো হলো, 

(0, 3), (0, –3), (1, 2√2), (1, –2√2).....


এখন এই বিন্দুগুলোর মধ্যে আমরা যদি ফাংশন (অন্বয়) বের করতে পারি তাহলে সেটা এই বৃত্তের সমীকরণ হবে। সেটা হবে,

   x² + y² = 3²


এখন আমরা সরলরেখার সমীকরণ দেখব। মনে করো আমাদের কাছে দুইটা বিন্দু আছে। (0, 5), (–5, 0) । এখন আমরা এই বিন্দুগুলোর ভূজ আর কোটির মধ্যে সম্পর্ক করার চেষ্টা করব। সম্পর্কটা হবে এমন যাতে এই সরলরেখার যে-কোনো বিন্দুর ভূজ আর কোটির জন্য সেটা সত্য হয়। 

আমি দুইটা বিন্দু নিয়েছি, কেউ চাইলে অনেকগুলো বিন্দু নিয়ে কাজ করতে পারে। চলো এখন দেখি ভূজ আর কোটির মধ্যে সম্পর্ক করা যায় কিনা। 

(0, 5), (–5, 0) এই বিন্দুগুলোর ক্ষেত্রে ভূজের সাথে 5 যোগ করলে আমরা কোটি পাই। 

5 = 0 + 5, 0 = –5 + 5

তাহলে, এই বিন্দুগুলোর মধ্যে সম্পর্কটা হলো,

 y = x + 5 

এই সমীকরণটাই হলো (0, 5), (–5, 0) বিন্দু দিয়ে আঁকা সরলরেখার সমীকরণ। এখন একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। আমি এই সরলরেখাটার সমীকরণ বের করার জন্য ভূজকে প্রক্রিয়া করে কোটি কীভাবে পেলাম সেটাকে ফাংশন হিসেবে ধরেছি। কেন ভূজকে প্রক্রিয়া করলাম? কোটিকে কেন না?


আমি কিন্তু আগেই বলেছিলাম যে ভূজ হলো ফাংশনের ডোমেন (ইনপুট) আর কোটি হলো ফাংশনের রেঞ্জ (আউটপুট) । 

ফাংশনে আমরা কী করি? ডোমেনকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া করেই তো রেঞ্জটা পাই, তাই না?

(এখানে একটা কথা বলে নিই, ফাংশনে যেহেতু ডোমেনকে প্রক্রিয়া করে রেঞ্জ পাই, তাই ফাংশনকে মেশিনের সাথে তুলনা করা যায়) 

যেহেতু আমি ধরে নিয়েছি ডোমেন হলো ভূজ আর রেঞ্জ হলো কোটি। তাই ডোমেনকে প্রক্রিয়া করে রেঞ্জ পাওয়ার মাধ্যমে আমি ফাংশন বের করেছি। বা ডোমেনটাকে, ভূজটাকে মেশিনে ঢুকালে মেশিন কীভাবে কাজ করে রেঞ্জ/কোটি বের করে সেটা পর্যবেক্ষণ করেই আমি ফাংশন বের করেছি। একটা কথা একটু বলে নিই, ফাংশন যেহেতু মেশিনের মতো, এই মেশিন আসলে একটা সেটের বাহিরে আউটপুট

(রেঞ্জ) দিতে পারে না। ব্যাপারটা হলো তুমি যেই ইনপুটই দাও না কেন মেশিনটা সবসময় একটা সেটের ভেতরে ওই ইনপুটের জন্য আউটপুট দেবে। আর সেই সেটটাকেই ফাংশনের ভাষায় বলে কোডোমেন। এই আলাপ আর দীর্ঘায়িত না করি। আমরা আবার সরলরেখার সমীকরণে ফিরে যাই।


একটু আগে যে আমরা একটা সরলরেখার সমীকরণ বের করেছি। সেটা ছিল একটা নির্দিষ্ট চিত্রের জন্য সরলরেখার সমীকরণ। y = x + 5, এই সমীকরণটা আসলে সব সরলরেখার জন্য সত্য না। তাই আমরা এমন কিছু সমীকরণ তৈরি করবো যা সব সরলরেখার জন্য সত্য হবে। সেটাকে অন্য ভাষায় বলা যায়, সরলরেখার সমীকরণের General Form দাঁড় করাব। 



২.

সরলরেখার General Form এর জন্য আগে জানতে হবে সরলরেখা কী, সেটা। 


ইউক্লিড তাঁর ‘এলিমেন্টস্’ বইয়ে বলেছেন, ‘সরলরেখা এমন একটা রেখা, যা তার বিন্দুগুলোর সাথে সমানভাবে সাজানো থাকে।'

এর মানে হলো – সরলরেখার বিন্দুগুলো এলোমেলো থাকতে পারবে না। সমানভাবে বিন্দুগুলো সজানো থাকবে। 

কার্তেসিয় জ্যামতিতেও এই ব্যাপার খাটে ভূজ আর কোটি দিয়ে বিভিন্ন বিন্দু তৈরি হবে। এই বিন্দুগুলো স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় বসিয়ে যোগ করলে একটা সরলরেখা পাওয়া যাবে। 


একটু আগে আমরা যে সমীকরণ দেখলাম–


y = x + 5 , 

এখানেও কিন্তু বিন্দুগুলোর সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। 


তাই সরলরেখার সমীকরণের General Form দাঁড়া করানোর জন্য আমাদের একটা বিন্দু নিতে হবে। এই বিন্দুটা যে সরলরেখাটার সমীকরণ বের করব তার সব বিন্দুর প্রতিফলন। মানে হলো, বিন্দুটা হবে বীজগাণিতিক বিন্দু P(x, y), এখানে x ওই সরলরেখার সব ভূজের প্রতিনিধিত্ব করে আর y ওই সরলরেখার সব কোটির প্রতিনিধিত্ব করে। 


সরলরেখার সমীকরণ তৈরির জন্য আরেকটা জিনিস লাগবে। সেটা হলো ‘ঢাল’। এই ঢাল একটা সমীকরণের পুরো বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। 

সরলরেখার সমীকরণ দিয়ে বিভিন্ন সরলরেখার বৈশিষ্ট্য বোঝা যাবে। ঢাল যেহেতু একটা সরলরেখার সার্বিক বৈশিষ্ট্য বলতে পারে, তাই সরলরেখার কিছু সমীকরণ ঢাল দিয়েই বের করতে হয়। আর সমীকরণ যেহেতু বীজগাণিতিক রূপ হবে, তাই আমি P(x, y) বীজগাণিতিক বিন্দুটা নিয়েছি। 


এখন আমরা জেনে গেছি, সমীকরণের জন্য লাগবে P(x, y) বিন্দুটি কারণ এটি সকল বিন্দুর প্রতিনিধিত্ব করে। আর লাগবে ঢাল, কারণ এটা সরলরেখার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে। এখানে আরেকটা বিষয় জানা দরকার, প্রথমে আমরা y = x + 5 সমীকরণের জন্য নির্দিষ্ট দুইটা বিন্দু পেয়েছিলাম। তারপর প্রতিটা বিন্দুর ভূজ-কোটর মাঝে একটা ফাংশন দেখিয়েছিলাম যাতে আমরা বুঝতে পারি বিন্দুগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে (ভূজ আর কোটি দিয়েই বিন্দু তৈরি। তাই এদের সম্পর্ককে বুঝতে পারলে বিন্দুগুলোকে বোঝা যায়)। যেহেতু সমীকরণ তৈরির সময় আমরা নির্দিষ্ট রেখা পাচ্ছি না, তাই নির্দিষ্ট বিন্দু পাওয়াও সম্ভব না। এইজন্যই একটা বীজগাণিতিক বিন্দু P(x, y) নিয়েছি। 

ঢাল শব্দটাও ইতোমধ্যে বলেছি কিন্তু সেটা কি খায়, না বল খেলে সেটা বলিনি। সমীকরণের জন্য যেহেতু ঢাল লাগবেই তাই একটুখানি পরিচয় না দিলেই নয়। 


 ❝ ঢাল হচ্ছে সরলরেখার পরিবর্তনের হার। ❞


সরলরেখা বিন্দু দিয়ে তৈরি। বিন্দুগুলো ভূজ (x), কোটি (y) দিয়ে তৈরি, তাই ঢাল হলো x এর মান বৃদ্ধির সাথে সাথে y এর মান বৃদ্ধির হার। 

ঢাল দিয়ে যেহেতু সরলেরেখার পরিবর্তন বা বৈশিষ্ট্য মাপা হয়, তাই একক মাপ বা হারটা জরুরি। 


মনে করো দুইটা বিন্দু– (2, 1), (5, 3)  

এখানে, 

x এর মান 3 একক বেড়েছে যার জন্য y বেড়েছে 2 একক 

∴ x এর মান 1 একক বাড়লে y বেড়েছে ⅔ একক। 


⅔, এটাই ঢাল। 


তাহলে সাধারণ সূত্রটা হলো, 

  

 ঢাল = (y₂ –  y₁) ÷ (x₂ –  x₁)

        বা, (Δy/Δx)

(Δy হলো y এর পরিবর্তন Δx হলো x এর পরিবর্তন। আশা করি বুঝতে পেরেছ।)


একটা সরলরেখার ঢাল সবসময় একই থাকে। কারণ ঢাল মূলত একটা অনুপাত (Δy/Δx) । তাই নির্দিষ্ট একটা সরলরেখার যে-কোনো বিন্দুর ঢাল একই থাকে। এই বিষয়টাই আসলে সমীকরণ তৈরির সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 


এত বকবকানির কারণ হলো সমীকরণ তৈরির জন্য এগুলো অনেক বেশি দরকার। এখন আমরা সমীকরণ বানাই। ভয় পাবার কিছু নেই, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপরই সমীকরণ নির্ভর করবে। 


দেখেছ কি চক্ষু মেলিয়া: 

সরলরেখার সকল বিন্দুগুলোর ভূজ আর কোটি একটা নির্দিষ্ট Law মেনে চলে। প্রথমেই কিন্তু আমরা সেটা উদাহরণে দেখেছি। সেখানে ভূজের সাথে 5 যোগ হয়ে কোটি হয়েছে। সেই সরলরেখার সববিন্দুই কিন্তু এই Law মেনে চলছে!



৩.

আমি শুরু করছি সমীকরণ বানানো। গেট সেট গো!


মনে করো, আমার কাছে y অক্ষের ছেদক (c) আর ঢাল দেওয়া আছে। এখন আমি সরলরেখার সমীকরণ বের করব। 


সাধারণত, স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় যদি একটা সরলরেখা দেওয়া থাকে তাহলে আমরা বলতে পারি, সেটার ঢাল কত, y ও x অক্ষকে কোথায় ছেদ করল, ভূজ আর কোটিগুলোর সম্পর্ক।

কিন্তু আমাদের যদি নির্দিষ্ট কিছু তথ্য দেওয়া থাকে তখন সেটা থেকে ভূজ আর কোটি মধ্যে সম্পর্ক বের করে সমীকরণ তৈরি করতে হয়। আর সেই সমীকরণ দিয়ে চিত্র না এঁকেও বলা যায় সরলরেখা সম্পর্কে। 

এটাই সমীকরণের মাহাত্ম্য। 


আমার এক বন্ধু এসে আমাকে বলল, “তোকে আমি একটা সরলরেখার ঢাল আর y অক্ষের ছেদক দিলাম, এখন পারলে আমাকে দেখা রেখাটা x অক্ষের কোন বিন্দুতে ছেদ করে।” 


এখন এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য আমি কী করব?

সরলরেখার সমীকরণ বের করব। 


        (চিত্র-১)


আমি তো জানি না আমার বন্ধু আমাকে কী কী তথ্য দেবে। আমি ধরে নিই যে, y অক্ষের ছেদক c, আর ঢাল m , এইটুকু তথ্য দিলো।

যেহেতু y অক্ষের ছেদক c, তাই আমি একটা বিন্দু পেলাম (0, c) আর এই সরলরেখার বিন্দুগুলোর প্রতিনিধি P(x, y) আরেকটা বিন্দু পেলাম। যেহেতু আমি জানি ঢাল m । তাহলে এই দুই বিন্দুর ঢাল বের করলেই আমরা সমীকরণ পাব। 

চিত্র-১ থেকে আমরা ঢাল বের করব। ডায়াগ্রামে আমি সুন্দরভাবে তথ্যগুলো বসিয়েছি। তারপর P(x, y) বিন্দু থেকে x অক্ষে লম্ব টেনেছি, (0, c) বিন্দু থেকে x অক্ষের সমান্তরালে লম্ব টেনেছি। 


ঢাল সম্পর্কে জানার সময় দেখেছি, 

ঢাল = Δy/Δx 


A কোণের সাপেক্ষে Δy হলো লম্ব আর Δx হলো ভূমি। 


অর্থাৎ, ঢাল = লম্ব/ভূমি = tanθ 


আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় এমন একটা সমকোণী ত্রিভুজ তৈরি হয়েছে। এখন যদি আমি এখান থেকে tanθ বের করি, তাহলেই ঢাল পেয়ে যাব। (কারণ ত্রিভুজটার লম্ব y – c হলো Δy আর ভূমি হলো x যেটা Δx ) 

অতএব, ঢাল, 

m = (y – c)/x 

⇨ y = mx + c 


y = mx + c এটাই আমাদের সমীকরণ। একটু বলেছিলাম না, সমীকরণের জন্য ঢাল লাগবে, এখন বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা! 


আমরা সাধারণত y = mx + c দেখলে বলি c কেন y অক্ষের ছেদক। x অক্ষের ছেদক হলে কী হতো?

x অক্ষের ছেদক হলে কিছুই হতো না, শুধু সমীকরণটা চেঞ্জ হতো। আমি c কে x অক্ষের ছেদক ধরে আরেকটা সমীকরণ বানাতে পারি। 


        (চিত্র-২)


∴ ঢাল, m = y/(x – c) 

⇨ y = m(x – c)  

(x যেহেতু ধনাত্মক দিকে আর c ঋনাত্নক দিকে, 

তাই x – c, বিন্দুগুলোতে তাকাও)


যদি c, x অক্ষের ছেদক হয়, তাহলে সমীকরণ y = mx + c, সবই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে। 

আমার বন্ধুর কথা মনে আছে?

সে বলেছিল x অক্ষের ছেদক বের করতে হবে। সেটা কীভাবে করব? 

এটা পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম। 



৪.

আমার কাছে যদি ঢাল আর রেখার ওপর একটা বিন্দু দেওয়া থাকে, তাহলে সমীকরণ কীভাবে বের করব?


ধরে নিচ্ছি, ঢাল হলো m আর বিন্দুটা (x, y) । এখন গ্রাফ আঁকি। কেউ চাইলে কেউ চাইলে বিন্দু থেকে ঢাল বের করে সমীকরণ বের করতেও পারবে। আমি চিত্রটা দেখিয়ে দিচ্ছি, বুঝতে সুবিধা হবে। 


        (চিত্র-৩)


চিত্র-২ এ আমরা তথ্য দেখেছি। যেহেতু আমরা ঢাল জানি, তো তাহলে সরাসরি ঢাল থেকে সমীকরণ বের করে ফেলি। 


ঢাল, m = (y –  y₁)/(x  –  x₁) 

⇨ (y  –  y₁) = m(x –  x₁)

এখানে (y  –  y₁) = m(x –  x₁) হলো আমাদের সমীকরণ। 


একটা জিনিস আবারো বলি, সাধারণত দুইটা বিন্দু দেওয়া থাকলে সহজেই একটা নির্দিষ্ট সরলরেখার সমীকরণ পাওয়া যায়। আমাদের কাছে সবসময় দুইটা বিন্দু থাকে না। তাই আমরা P(x, y) কে একটা আদর্শ বিন্দু হিসেবে ধরে নিই। তারপর কাজ করি।



৫.

এখন আমাকে দুইটা বিন্দু দিয়ে বলল, সমীকরণ বের করতে। 

যারা এতক্ষণ ধরে পড়ছ, নিশ্চয়ই বলবে, আমি তো কষ্ট করে রেখাটা আঁকতেই পারি। কেন সমীকরণ বানাব?

গণিতবিদরা এতই অলস যে এই চিত্রটাও তাঁরা আঁকবে না! তাঁরা সবকিছুর সমীকরণ বা বীজগাণিতিক রূপে বিশ্বাসী। 


চলো দেখি, দুইটা বিন্দু থাকলে কী করা যায়। 


ধরি বিন্দু দুইটা (x₁, y₁) আর (x₂, y₂) । 


কেউ ভাবতে পারেন এই দুইটার ঢাল বের করলেই তো হবে। 

না, হবে না। 

কারণ এই দুইটার ঢাল বের করলেই তো আর বৈশিষ্ট্যগুলো বলা যাবে না। 

তাই P(x, y) কে লাগবেই। কারণ আমরা যেহেতু সমীকরণ বের করছি, সমীকরণের কিছু নিয়ম মানতে হবে। 

যেমন, দুইটা বহুপদী সমান চিহ্ন দিয়ে যুক্ত থাকবে। কখনো এক পক্ষে বহুপদী, অন্য পক্ষে শুন্যও হতে পারে। 

তাই আমাদের তিনটা বিন্দু থেকে দুইটা ঢাল বের করে সমান চিহ্ন দিয়ে যুক্ত করতে হবে। কারণ একটা সরলরেখার বিন্দুগুলোর ঢাল সবসময় সমান। 



        (চিত্র-৪)


    (y – y₁)/(x – x₁) = (y₁ – y₂)/(x₁ – x₂)

⇨ (y – y₁)(x₁ – x₂) = (x – x₁)(y₁ – y₂) 

⇨ (y – y₁)/(y₁ – y₂) = (x – x₁)/(x₁ – x₂)


(y – y₁) ÷ (y₁ – y₂) = (x – x₁) ÷ (x₁ – x₂) এটাও একটা সমীকরণ। 


রেখার সমীকরণ কিন্তু এই অল্প কয়েকটা না। আরও অনেক ধরণের হতে পারে। 

আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য হলো শুধুমাত্র সরলরেখার সমীকরণকে অনুভব করানো। এটা যে ভয়ের কিছু না, সেটা বুঝানো। 

শুধু সরলরেখা না, আমাদের জীবনও আসলে নির্ভর করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। কিন্তু সেটা হতে হবে শুদ্ধ। দৃষ্টিভঙ্গিতে গোঁজামিল হলে সমীকরণের মতো জীবনও ওলটপালট হয়ে যাবে!


পুনশ্চঃ গণিতের সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিসের মতো মধ্যে একটা হলো সরলরেখা বা রেখা। রেখা তৈরি হয় বিন্দু দিয়ে, যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কিছুই নেই। অথচ এই শূন্য জিনিসগুলো মিলে একটা দৈর্ঘ্য তৈরি করছে, যা একটা সরলরেখা!


♦ কৃতজ্ঞতা–
এই লেখাটি লিখতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে শ্রদ্ধেয় চমক হাসান ভাইয়ের সুন্দর সব ভিডিও। 

Oyahidur Rahman Mohin

I am Mohin. Reading, writing and thinking are my passion. I usually write fiction and non-fiction for pleasure. And I am trying to touch the tune of life. "Life is really very simple but we insist on making it complicated."

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম