ক্যামিস্ট্রি নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, কিংবা সেকেন্ডারি, হায়ার সেকেন্ডারি পর্যায়ে ক্যামিস্ট্রি পড়ে তাদের মধ্যে ক্যামিস্ট্রি নিয়ে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। তবে বেশিরভাগই একটা ব্যাপারে সহমত হবে যে, Chemistry is a subject of Exception. Exceptional, Exceptional শব্দ শুনতে শুনতে পুরো সাবজেক্টাই আমাদের কাছে Abnormal হয়ে উঠে! যেখানে কিছু নিয়ম-নীতি পড়তে হয় যা কিনা আমাদের কখনো অনুভব করানো হয় না। তেমনি একটা বিষয়বস্তু হচ্ছে, "হাকেল তত্ত্ব"। খুবই অদ্ভুত একটা তত্ত্ব আমার কাছে মনে হয়েছে একে, যখন আমি প্রথম এই "হাকেল তত্ত্ব" পড়ি! তত্ত্বটির গতানুগতিক সংজ্ঞায় আমি যাব না, সোজা বাংলায় বললে, "যেসব সমতলীয় চাক্রিক যৌগে 4n+2 সংখ্যক পাই ইলেকট্রন থাকে তারা অ্যারোমেটিক যৌগ হয়"। আমি যখন এটা জানি তখনামার একে কেবল দৈববাণীর মতো লেগেছে, যার গভীরের কোনোকিছুই আমি জানি না! আজকে আমাদের আলোচনা এই "হাকেল তত্ত্ব আর অ্যারোমাটিক"দের নিয়েই থাকবে।
১.হাকেল তত্ত্ব: যৌক্তিক নাকি আন্দাজ?
হাকেল তত্ত্বের বিবৃতি অংশটুকু উপরে কিছুটা বলেছি। বই পত্র খুললে নানান জায়গায় n এর অদ্ভুত অদ্ভুত পরিচয় পাওয়া যায়। কোথাও একে পঞ্চভুজ কিংবা ষড়ভুজের চক্র সংখ্যা বলা হয়, আরও অনেক কিছু। এই তত্ত্ব বোঝার আগে আমরা একটু জেনে আসি একটা যৌগ কখন অ্যারোমেটিক হবে?
অ্যারোমেটিক হওয়ার ক্ষেত্রে একটা যৌগের তিনটা বৈশিষ্ট্য আমরা দেখব,
১. চাক্রিক কিনা
২. সমতলীয় কিনা
৩. হাকেল তত্ত্ব সমর্থন করে কিনা
যেমন, সাইক্লোপ্রোপিনয়াম আয়ন(চিত্র-০১)। এটা কি চাক্রিক? হ্যাঁ। এটা কি সমতলীয়? আচ্ছা একটা যৌগ সমতলীয় কিনা তা যাচাই করার উপায় হলো সংকরায়ন। যখন একটা যৌগের সংকরায়ন sp2 হয় তখন তা সমতলীয় হয়। এখন sp2 কি এটা নিয়ে একটু পর হালকা ধারনা দিব। (চিত্র-০২, একটা s আর দুইটা p orbital মিলে sp2 সংকরায়ন হয়)
যারা এই ব্যাপারে জানেন না, তাদের জন্য- যদি একটা যৌগের মধ্যে কোনো পরমানু আশেপাশের তিনটা পরমাণুর সাথে একক বন্ধনে আবদ্ধ থাকে (কিংবা একক বন্ধন আর লোন পেয়ার ইলেকট্রনের যোগফল ৩ হয়) তখন সেই যৌগ হবে সমতলীয়। যেমন, ইথিন ; এখানে প্রতি কার্বন পাশের অপর কার্বনের সাথে একটা ও দুইটা হাইড্রোজেনের সাথে দুইটা একক বন্ধনে আবদ্ধ থাকে তাই এটা সমতলীয়। একটু হিসাব করলেই দেখবেন সমতলে কোণ হয় ৩৬০° আর তিনটা একক বন্ধনের জন্য তিন দিয়ে ভাগ করলে বন্ধন কোণ হয় ১২০°। এই কোণটা একটু মাথায় রাখবেন। তারপর এরা কি হাকেল তত্ত্ব মানে? হ্যাঁ মানে, ২ টা পাই ইলেকট্রন থাকে।
আবার সাইক্লোপ্রোপিন যৌগে(চিত্র-০৩), চাক্রিক? হ্যাঁ। সমতলীয়? না, কারণ একটা কার্বন আছে যেখানে কার্বন তার আশেপাশে চারটি একক বন্ধনে যুক্ত। sp3 সংকরিত কার্বন বলে একে। যেহেতু সমতলীয় না, তাই এটা অ্যারোমেটিক না। প্রশ্ন হলো কেন? কারণ আমরা জানি। দেখুন, অ্যারোমেটিক যৌগরা কেন এত সুন্দর, বিখ্যাত? কারণ তাদের সঞ্চারণশীল পাই ইলেক্ট্রন। তাদের মধ্যে দ্বিবন্ধনযুক্ত ইলেকট্রনগুলো সারা যৌগে ছড়িয়ে থাকে, কোনো একটা অঞ্চলে পাই অরবিটালের ওভারলেপে আবদ্ধ থাকে না। ( অ্যারোমেটিকের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য পড়তে আমার লেখা পূর্বের একটি আর্টিকেল পড়ে আসতে পারেন)। আর এই ওভারলেপের জন্য অরবিটালগুলোর মধ্যে একটা সামঞ্জস্যতা দরকার। তারা তখনি সবচেয়ে ভালো ওভারলেপ করতে পারে যখন তারা একই সমতলে থাকে। কেন? কারণ p-orbital হয় অসংকরিত, তারা পরস্পরের সাপেক্ষে সমান্তরাল অন্য p-orbital এর সাথে পাই বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর অ্যারোমেটিক যৌগে প্রতি কার্বনে একটি করে p-orbital থাকে। তারা তখনি ভালোভাবে ওভারলেপ করতে পারে, যখন তারা সমতলে ( যার কারণে সমান্তরালে অবস্থান করে) থাকে। আর তার জন্যই প্রতি কার্বনে sp2 সংকরায়ন হতে হয়। এখন যেহেতু সমতলীয় না এরা তাই অ্যারোমেটিকও হবে না।
এখন আসা যাক, কী এই "হাকেল তত্ত্বের" মাহাত্ম্য তাতে!
২.Molecular Orbital Theory
হাকেল তত্ত্ব বোঝার জন্য আমরা একটু মলিকিউলার অরবিটাল বা আনবিক অরবিটাল তত্ত্ব সম্পর্কে জানব। হাইড্রোজেন পরমাণুতে হাইড্রোজেনের ইলেক্ট্রন বিন্যাস H(1)=1s^1
এখানে 1s কি? এটা হলো হাইড্রোজেন পরমাণুর অববিটাল। আর এই ২ টি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে যখন একটা অনু তৈরি করে তখন অরবিটাল হয় 1s^2 যেখানে 1s হলো হাইড্রোজেন অণুর অরবিটাল। অণুর অরবিটাল আর পরমাণুর অরবিটালে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। অণুর অরবিটালগুলো পরমাণুর অরবিটাল থেকে অনেক স্থিতিশীল হয়। অর্থাৎ এনার্জি ডায়াগ্রামে এরা নিচে অবস্থান করে।
একটু আগের বলা, sp2 & sp3 ও আসলে পারমাণবিক অরবিটাল। যেখানে যথাক্রমে পরমাণুর একটি s দুইটি p মিলে sp2 পারমাণবিক অরবিটাল তৈরি করেছে। sp3 কিভাবে হয় আশা করি বুঝে গেছেন। ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করি, প্রতিটা পরমাণুর নিজস্ব কিছু অরবিটাল থাকে। সেই অরবিটালগুলো ডিরেক্ট অণু গঠনে পার্টিসিপেট করতে পারে না। আর পার্টিসিপট করার জন্য তাদের একটা প্রিপারেশন লাগে। সংকরিত অরবিটালগুলো হলো সেই প্রস্তুতির অংশ, যেগুলো কিনা পরমাণুর পার্ট। আর পরবর্তীতে এই সংকরিত অরবিটালগুলোই ওভারলেপ করে আণবিক অরবিটাল তৈরি করার মাধ্যমে অণু গঠন করে। পার্থক্যটা কি বুঝা গেছে?
এখন মলিকিউলার অরবিটাল থিওরী বা এমওটি'র মাধ্যমে আপনি আসলে বুঝতে পারবেন একটা যৌগ প্রকৃতিতে পাওয়া সম্ভব কিনা বা পাওয়া গেলে তা কিভাবে বন্ড ফর্ম করবে! এখানে বলে রাখা উচিত যে, পরমাণুর যে কয়টি অরবিটাল মিলে আণবিক অরবিটাল ফর্ম করবে ঠিক তত সংখ্যক আণবিক অরবিটালই তৈরি হবে। যেমন ৩ টা পারমাণবিক অরবিটাল যুক্ত হলে ৩ টা আণকবিক অরবিটা ফর্ম করবে। কেন ফর্ম করবে? স্থিতিশীলতার জন্য। আর যেই কয়টা আণবিক অরবিটাল তৈরি হবে তার অর্ধেক হবে বন্ডিং অরবিটাল আর বাকি অর্ধেক হবে অ্যান্টি-বন্ডিং অরবিটাল। আমি একটু ব্যাখ্যা করি এই পর্যায়ে— দেখুন, বন্ডিং অরবিটাল হলো তারা যাদের শক্তি কম। অর্থাৎ এনার্জি ডায়াগ্রামে যাদের অবস্থান নীচে। আর অ্যান্টি-বন্ডিং হলো তারা, যাদের অবস্থান এনার্জি ডায়াগ্রামের উপরে। ইলেক্ট্রন স্বভাবতই স্থিতিশীল থাকতে চায়, তাই তারা আগে বন্ডিং অরবিটালে অবস্থান করবে। পরবর্তীতে উপরের শক্তিস্তরে যাবে। আউফবাউ নীতি অনুসারেও আমরা এটা জানি। বন্ডিং অরবিটাল, অ্যান্টি-বন্ডিংয়ের বাইরে নন-বন্ডিং অরবিটালও হয়। একটু পরে আমরা তা দেখব।
এখন একটা যৌগে বন্ড কেমন থাকবে তা এই bonding & anti-bonding orbital থেকে বোঝা যায়। কোনো যৌগে বন্ধন কতটা হবে তা বোঝায় "বন্ধন ক্রম" বা bond order দ্বারা।
Bond order = (#e of bonding orbital – #e of anti-bonding orbital) ÷ 2
এটা দিয়ে আসলে কি হয়? অক্সিজেন, এর পারমাণবিক অরবিটালে ইলেক্ট্রন বিন্যাস কি?
O(8) = 1s^2 2s^2 2p^4 [2,1,1]
O(8) = 1s^2 2s^2 2p^4 [2,1,1]
(চিত্র-০৪, এখানে স্টার মার্ক দ্বারা উচ্চ শক্তির অ্যান্টিবন্ডিং অববিটাল বোঝানো হয়েছে)
এখানে পরমাণুর লাস্ট অরবিটালগুলোই যৌগ গঠনে ভূমিকা রাখে। তাই লাস্ট অরবিটালগুলোর হিসাব আমরা করতে পারি (যৌগে কিন্তু সকল অরবিটালই আণবিক অরবিটাল হয়ে যায়। কেবল হিসাবের সুবিধার্থে আমরা লাস্ট অরবিটাল নিয়ে কাজ করছি)। তো এখানে ৬ টা p orbital এর (২টা পরমাণু পার্টিসিপেট করবে, তাদের উভয়ের ৩ টা করে ৬ টা অরবিটাল) ৩ টা হবে Bonding বাকি ৩ টা হবে Anti-bonding। অর্থাৎ এনার্জি স্টেটে ৩ টা বন্ডিং অরবিটাল ডিজেনারেট অবস্থায় (সমশক্তিসম্পন্ন) নীচে আর ৩ টা অ্যান্টি-বন্ডিং ডিজেনারেট অরবিটাল উপরে অবস্থান করবে। আউফবাউ ও হুন্ডের নীতি অনুসারে, বন্ডিং অরবিটালে ৬ টি ইলেকট্রন থাকবে পেয়ারড অবস্থায় তারপর অতিরিক্ত ২ টি ইলেকট্রন আন-পেয়ারড অবস্থায় অ্যান্টি বন্ডিং অরবিটালে অবস্থা করবে।
সুতরাং, Bond order = (6-2)/2 = 2
অর্থাৎ অক্সিজেন অণুতে দুইটি পরমাণু দুইটা বন্ধন ফর্ম করবে। যার একটি অবশ্যই সিগমা বন্ধন, অন্যটি পাই বন্ধন। (অরবিটাল মুখোমুখি ওভারলেপ করে সিগমা বন্ধন আর পাশাপাশি ওভারলেপ করে পাই বন্ধন গঠন করে। বলুন তো কোন বন্ড বেশি শক্তিশালী?)
এভাবেই প্রতিটি যৌগে বন্ড কেমন হবে বা আদৌ বন্ড হবে কিনা তা বোঝা যায় এমওটি দিয়ে। উৎসাহীরা একই প্রসেসে নিয়ন অণু কেন হয় না তা বের করতে পারেন। এই পর্যন্ত ধারণাগুলো ক্লিয়ার থাকলে আমরা এখন মূল আলোচনায় প্রবেশ করতে পারব। তার আগে দুইটা বিষয় ভালো মতো বুঝে নিন, ১. বন্ডিং অরবিটাল আর অ্যান্টিবন্ডিং অরবিটাল সমান সংখ্যক। ২. ইলেক্ট্রন আগে বন্ডিং পরে, অ্যান্টি বন্ডিংয়ে যাবে।
এখানে পাঠকের নিকট দুইটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছি–
১. কেন bonding & anti-bonding orbital number সমান হয়?
২. Bond order বের করার নিয়মটা কেন উপরিউক্তভাবে কাজ করে?
আশা করি, প্রশ্নের বিপরীতে চিন্তাগুলো আপনাদেরকে অনুভব করাতে শিখাবে বিজ্ঞান কত সুন্দর; রসায়ন কত সুন্দর!
৩.Frost Diagram
অ্যারোমেটিক যৌগে Bonding, Anti-bonding orbital বের করতে আমরা ফ্রস্ট ডায়াগ্রাম ব্যবহার করি। এতে খুব সহজেই অ্যারোমেটিকদের বুঝা যাবে। অ্যারোমেটিক যৌগকে মহিমান্বিত করে তুলেছিল সঞ্চারণশীল পাই ইলেক্ট্রনগুলো। আর আমরা ফ্রস্ট ডায়াগ্রামের মাধ্যমে Bonding & Anti-bonding orbital এ তাদের বিন্যাস করে বোঝার চেষ্ট করব অ্যারোমেটিসিটি।
ফ্রস্ট ডায়াগ্রাম আঁকার কিছু পদ্ধতি আছে–
১. চাক্রিক যৌগের যেকোনো একটা কোণাকে এনার্জি স্টেটের নীচে রাখতে হবে।
২. এর ফলে যে স্ট্রাকচার পাওয়া যাবে তার প্রতিটি শীর্ষ বা কোণাকে ঘেঁষে একটা বৃত্ত আঁকব।
৩. বৃত্তের মাঝ বরাবর একটা রেখা টানব। রেখার নীচের অরবিটালগুলো হবে bonding, উপরের গুলো anti-bonding, আর যেসব অরবিটাল রেখার উপরে পড়বে তারা হবে non-bonding orbital.
(চিত্র-০৫, সাই দ্বারা আণবিক অরবিটাল বোঝায়)
চিত্রে বেনজিনের ফ্রস্ট ডায়াগ্রামে তাকিয়ে আমরা অ্যারোমেটিকদের বোঝার চেষ্টা করব। যেহেতু বেনজিন আমাদের রেফারেন্স হিসাবে কাজ করে। ডায়াগ্রামে দেখা যাচ্ছে বেনজিনে ৩ টা বন্ডিং ও ৩ টা অ্যান্টিবন্ডিং অরবিটাল আছে। কোনো নন-বন্ডিং অরবিটাল নেই। যেখানে বন্ডিংয়ে ২ টা ডিজেনারেট অরবিটাল আছে, তার নিচে আরেকটা অরবিটাল। আউফবাউ আর হুন্ডের নীতি অনুসারে, বেনজিনের ৬ টি পাই ইলেকট্রন ৩ টি বন্ডিং অরবিটালে প্রবেশ করবে। আর অ্যান্টিবন্ডিং অববিটাল থাকে খালি। এখান থেকে কয়েকটা সুন্দর বিষয় বোঝা যায়। যেসব চাক্রিক সমতলীয় যৌগে bonding orbital fulfil & anti-bonding orbital খালি থাকে, তারাই অ্যারোমেটিসিটি প্রদর্শন করে। কারণ এটাই হলো সবচেয়ে স্থিতিশীল অবস্থা বা বিন্যাস যেখানে পাই ইলেকট্রনগুলো ঠিকঠাক সঞ্চারণশীল অবস্থায় থাকতে পারে বা সবচেয়ে ভালোভাবে সঞ্চারণশীল হতে পারে। আর অ্যারোমেটিক যৌগদের জন্য এই সঞ্চারণশীল ইলেক্ট্রনগুলো খুবই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।এরাই অন্য যৌগ হতে অ্যারোমেটিকদের আলাদা করেছে।
এখন আসি মূল আকর্ষণে, এই যে বেনজিনের ৩ টি বন্ডিং অরবিটালে ৬ টি ইলেক্ট্রন আছে এটা পর্যবেক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর থেকেই চমৎকার একটা ধারণা বের হয়ে আসে। মনে করুন তো, হাকেল তত্ত্ব কি ছিল?
4n+2 সংখ্যক পাই ইলেকট্রন? ঠিক? একে লিখা যায়,
4n+2 = 2(2n+1)....... [1]
বেনজিনের ক্ষেত্রে, ডিজেনারেট অরবিটাল জোড় ছিল কতটি? 1 টি। 1নং এ n=1 বসালে সংখ্যাটা কি আসে? 2×(3)=6।
এইযে, ছয় এটা কি বেনজিনের ডি-লোকালাইজড ইলেক্ট্রন বা সঞ্চারণশীল ইলেক্ট্রন না? তার মানে কি ধরতে পারছেন? হাকেল তত্ত্বে যেই n, এই n আসলে কি? এই n হলো তার ডিজেনারেট অরবিটাল জোড়ের সংখ্যা আর n=1 এর ফলে প্রাপ্ত 3 হলো তার bonding orbital এর সংখ্যা! যার প্রতিটায় 2 টা করে মোট 6 টা ইলেকট্রন।
তারমানে হাকেল তত্ত্ব আসলে আন্দাজে ছোঁড়া কোনো ঠিল না, এটা খুবই যৌক্তিক একটা সিদ্ধান্ত। তার মানে,
n → #Degenerate bonding orbital pair
2n+1 → #Bonding orbital
2(2n+1) →#Delocalized pi electrons
এখানে 1 টা কি ভাবুন তো? এটা হলো ফ্রস্ট ডায়াগ্রামের নিচের কোণার সেই বন্ডিং অরবিটাল।
সুতরাং, যেসব অ্যারোমেটিক যৌগে boning orbital জোড়া যথাক্রমে 0,1,2,3... সেসব অ্যারোমেটিক যৌগে সঞ্চারণশীল পাই ইলেক্ট্রন যথাক্রমে 2, 6, 10, 14...।
এখন, যখন অ্যারোমেটিসিটি আমরা বুঝতে পেরেছি। আমরা আরও কিছু যৌগ নিয়ে ভাবি। যেমন: অক্সিরিন। (চিত্র-০৬, এখানে অক্সিরিনের পাশাপাশি সাইক্লোপ্রোপিনয়াম আয়নের ফ্রস্ট ডায়াগ্রামও দেওয়া আছে তুলনা করে বোঝার জন্য)
অক্সিরিন যৌগে অক্সিজেন দুইটা কার্বনের সাথে একক বন্ধনে আবদ্ধ ও তার দুইটি লোন পেয়ার ইলেকট্রন বিদ্যমান। এখানে স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে অক্সিজেনের সংকরায়ন sp3 কিন্তু একটু আগেই আমরা দেখেছি যখন বন্ডিং অরবিটালগুলো পরিপূর্ণ থাকে তখন যৌগের স্থিতিশীলতা অনেক বেড়ে যায়। তাই যেসকল ক্ষেত্রে অ্যারোমেটিসিটি প্রকাশের সুযোগ থাকে, সেকল ক্ষেত্রে লোন পেয়ারগুলো সংকরিত অরবিটাল হতে অসংকরিত হয়ে যায়। কারণ এর ফলে যৌগে স্থিতিশীলতা বাড়ে। আর অসংকরিত না হলে যৌগে পাই অরবিটালগুলো সমান্তরালে আসবে না এবং ওভারলেপ হবে না। তাই স্থিতিশীলতা অর্জনের সুযোগ থাকলে লোন পেয়ার সঞ্চারণশীল ইলেক্ট্রনে পার্টিসিপেট করে। অক্সিরিন একটি চাক্রিক যৌগ। যদি এখানে অক্সিজেনের একটা লোন পেয়ার ডিলোকাইজড হয় তবে অ্যারোমেটিক হওয়ার চান্স থাকে। যদি একটা লোন পেয়ার অসংকরিত হয়ে ডিলোকালাইজড হয় তবে কি তা হাকেল তত্ত্ব সমর্থন করে কিনা দেখলতে হবে। অক্সিনের ফ্রস্ট ডায়াগ্রাম হতে দেখা যায় এর কোনো ডিজেনারেট বন্ডিং অরবিটাল নেই, n=0। আর তাই এর চারটা ইলেকট্রন ( ২ টা পাই ইলেকট্রন, ২ টা লোন পেয়ার ইলেকট্রন) বন্ডিং অরবিটাল পরিপূর্ণ করে অ্যান্টিবন্ডিং অববিটালে প্রবেশ করে। অর্থাৎ, এই যৌগে সর্বোচ্চ স্থিতিশীল থাকে না। তাই এটা অ্যারোমেটিক হয় না। যেহেতু এই চাক্রিক সমতলীয় যৌগে ডিলোকালাইজড ইলেক্ট্রন অ্যান্টিবন্ডিং অববিটালে প্রবেশ করে তাই একে অ্যান্টি-অ্যারোমেটিক যৌগ বলে।
আরেকটা ইন্টারেস্টিং যৌগ হচ্ছে, সাইক্লোঅক্টাটেট্রাইন। (চিত্র-০৭)
এই যৌগ চাক্রিক, প্রতি কার্বনে sp2 সংকরায়ন বিদ্যমান। তাই এর একটা তীব্র সম্ভাবনা আছে অ্যারোমেটিক হওয়ার। এখন, এই যৌগের ফ্রস্ট ডায়াগ্রাম পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই এতে, ৩ টি বন্ডিং, ৩ টি অ্যান্টিবন্ডিং ও ২ টি নন-বন্ডিং অরবিটাল আছে। যেখানে পাই ইলেকট্রন বন্ডিং অরবিটাল পরিপূর্ণ করে, নন-বন্ডিং অরবিটালে চলে যায়। তাই এটি অ্যারোমেটিক না। এখন প্রশ্ন হলো, নন-বন্ডিং অরবিটাল কেন উদ্ভব হলো? কারণ হলো এর স্ট্রাকচার। সাইক্লোঅক্টাটেট্রাইন যৌগে বন্ধন কোণ ১২০° এর চেয়ে বেশি হয়। ফলে এই নন-বন্ডিং অরবিটালের উদ্ভব হয়। যারা কিনা সমতল থেকে কিছুটা উপরের দিকে উঠে যায়। এটাই নন-বন্ডিং অরবিটাল উদ্ভবের কারণ। আর এইজন্যে p-orbital এর ওভারলেপও ভালো হয় না। এইযে, যেসব যৌগের ডিলোকালাইজড পাই ইলেকট্রন নন-বন্ডিং অরবিটালে চলে যায় তাদের নন-অ্যারোমেটিক যৌগ বলে।
এতক্ষণ যাবত এত আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল এতটুকু বোঝানো যে, ক্যামিস্ট্রি কোনো আজগুবি বিষয় না। মূলত বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ই আজগুবি না। এর পিছনে থাকে যৌক্তিক কারণ ও প্রমাণ। তাই হুট করে কোনো কিছু ভেবে বসা উচিত নয়। কারণ আমাদের কাছে বোধগম্য হয়ে ধরা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রকৃতির নেই!
তথ্যসূত্র:-
1. https://youtube.com/playlist?list=PLxSt9YDBipm4bPKfboDlSsRy_aZXboomT&si=r_G3d-goFd7UsaFm
2.
https://youtu.be/nTujP4jCbsg?si=aMcFW6VYrHUfYYij
3. বই:“রসায়ন দ্বিতীয় পত্র, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি”
লেখক: এস. কে. মিস্ত্রী
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত