পাটিগণিতের পথে পরিভ্রমণ

 



.জোড়–বিজোড়


স্কুলের নাম "কাঠখোট্টা প্রাথমিক বিদ্যালয়"। মুনির স্যারের ম্যাজাজ গরম,খাতা দেখে। 

তুই এটা কি করেছিস?

অংক করেছি, স্যার।

কালকে না বললাম যে, ১১÷৫ অংকটা পরীক্ষায় আসবে। ২+৪ এটাকে এতো ঢং করে লেখার কি আছে!

ছাত্র মুখ টিপে হাসছে, সে জানে ২+৪=৬। তবুও সে ৪ও ২কে ৫ দিয়ে গুণ করে,২০ আর ১০ বানিয়ে ৫ দিয়ে ভাগ দিয়েছে। 

বল কেন করেছিস, ত্যাদড়ামি করিস!তোকে বলি নি ১১÷৫=২.২। তুই ১১ আর ৫ কে ২ দিয়ে গুণ দিলি তারপর লিখলি ২.২! (৫ কে ২ দিয়ে গুণ দিলে ১০ হয়। আর ১০ দিয়ে সহজেই কোনো সংখ্যাকে ভাগ করা যায়। আর ৫ কে ১০ বানাতে হলে দুটো সংখ্যাকেই ২ দিয়ে গুণ দিতে হবে। তাই দুটি সংখ্যাকে ২ দিয়ে গুণ করা হয়েছে)

ছাত্র মহাখুশি, স্যারকে জব্দ করে। আসলে গল্পটা বলার কারণ হলো গণনাতত্ত্ব বা কম্বিনেটরিক্সের বিষয়টি বোঝানো। গণনাতত্ত্বের কাজ হলো গোণা। একটু মজা নিয়ে, ভিন্নভাবে গোনা। আর এই গোণতে গিয়ে আমরা পেলাম সংখ্যা। আজকে সংখ্যার বিভিন্ন অপারেটর নিয়ে কথা বলব। যেগুলো আমরা সেই পিচ্চিকাল থেকেই জেনে এসেছি। তাই আজকের আলোচনায় সবাইকে বিলম্বীত স্বাগতম !


জোড় নাকি বিজোড়:-


    জোড়ের ধারণা মূলত এসেছে জোড়া থেকে। জোড়া মানে হলো দুইটা জিনিস। দুইটা জুতা, দুইটা পা এমনভাবে দুইটা জিনিস নিয়ে হয় এক জোড়া বা ঐ যে, মুনির স্যারের মতো বললে, জোড়া হলো দুইটা জিনিসের সমাবেশ। আবার অনেক গুলো জিনিসকে যদি জোড়া জোড়া আকারে সাজানো যায়, তবে সেইগুলোও জোড়া। যেমন, চারটা জিনিসকে দুই জোড়া বলে। কারণ মনে করো চারটা জিনিস আছে। এখন আমাকে বলা হলো চারটা জিনিসকে প্যাকেট করতে যাতে প্রতিটায় ২ টা করে জিনিস থাকে। দেখ আমি এই ৪ টা জিনিসকে প্যাকেটে ভরি, ২টা ঢুকালাম এক প্যাকেটে বাকি ২ টা অন্য প্যাকেটে ঢুকিয়ে প্যাকেট গুলো পূর্ণ করলাম ( যেহেতু ১টা প্যাকে ২ টা জিনিস থাকবে, তাই দুইটা ঢুকালেই প্যাকেটটা পূর্ণ হয় )।যদি কোনো জিনিসকে জোড়া আকারে সাজানো যায় সেটাই জিনিসটাও জোড়া অর্থাৎ জোড়। আবার মনে করো আমার কাছে ৫টা বই আছে। আমাকে বলা হলো, ২টা করে বই নিয়ে একটা প্যাকেট বানাও। এখন আমাকে দেখতে হবে ৫ টা বই নিয়ে আমি কয়টা পূর্ণ প্যাকেট বানাতে পারি। যদি সবগুলো দিয়ে পূর্ণ প্যাকেট বানানো যায় তবে(অবশিষ্ট বা অপূর্ণ প্যাকেট না থাকে), ৫ হলো জোড়। এখন দেখ, আমি ২ বই নিয়ে একটা প্যাকেট বানিয়ে ফেললাম। অন্য ২টা নিয়েও আরেকটা প্যাকেট বানালাম। বাকি থাকে আরেকটা বই এটা দিয়েও একটা প্যাকেট বানালাম। দেখ আমি কি সবগুলো বই দিয়ে (৫টা) পরিপূর্ণ প্যাকেট বানাতে পেরেছি? না। কারণ শেষ প্যাকেটে ছিল ১ টা বই। তাই ৫ টা জিনিস দিয়ে পূর্ণ প্যাকেট বানাতে পারি নি অর্থাৎ ৫ টা জিনিসকে আমি জোড়া জোড়া করে সাজাতে পারি না তাই ৫ বিজোড় সংখ্যা। এই যে, এই দিকে এইদিকে বেশি খেয়াল দিতে হবে, জোড়া বানাতে পারলেই কিন্তু জোড়। কয়টা জোড়া বানাচ্ছি এটা জরুরি বিষয় না। 


গণিতের দৃষ্টি দিয়ে দেখি:


    যেহেতু ২ টা জিনিস নিয়ে ১ জোড়া তাই স্বাভাবিকভাবেই ২ জোড় সংখ্যা। কেন? দেখ এই জিনিসটা এভাবে ভাবতে মজা লাগে। ২ কে যদি ভাঙ তাহলে ২টা ১ পাওয়া যায়। যেহুতু ২  টা এএএএক তাই ২ জোড় সংখ্যা।

গণিত বলে, এই পিচ্চি তুই যদি কোনো সংখ্যাকে ২ দিয়ে ভাগ দিস। আর যদি কোনো ভাগশেষ না থাকে(ভাগ দেয়ার পর যেটা থেকে যায়। বা পূর্ণ প্যাকেট বানানোর পর যেগুলো থেকে যায়, যেগুলো একত্র করলে পূর্ণ প্যাকেট হয় না। যেমন, ৫ এর ক্ষেত্রে যা হয় )। তাহলে ঐ ভাজ্য, যেটাকে ভাগ করেছিস। সেটা জোড় সংখ্যা। 

এটা মনে হয় সবাই বুঝে গেছে। আবারও বলি, ২ দিয়ে ভাগ দিলে, যদি ভাগশেষ না থাকে তবেই সেটা জোড়। কারণ, দুই দিয়ে ভাগ দেয়ার পর ভাগশেষ না থাকলে, জোড়া বানানো যায়। আর ভাগশেষ থাকলে জোড়া বানানো যায় না। উপরে ৪ আর ৫ এর উদাহরণটা বুঝতে পারলে এইটা বোঝাও সহজ। এখন প্রশ্ন হলো ২ দিয়েই কেন ভাগ দিব? কারণ আমরা তো জানি ২ টা মিলে একটা জোড়া। আর ২ ভাগ দেয়া মানে দুইটা জিনিসের প্যাকেট বানানো।

এখন, আরেকটা ব্যাপার দেখি, যেকোনো সংখ্যাকে দুই দিয়ে গুণ দিলে যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটা জোড় সংখ্যা কেন? 

"এই শোন আজকে টাইম নেই রে। কালকে এসে জিনিসটা বুঝিয়ে দিব!"

" ঠিক আছে, স্যার।" 

( মুনির স্যারের প্রস্থান)


শূন্য নিয়ে বিভ্রান্তি


জোড় বিজোড় নিয়ে আলোচনায় একটা বিষয় আমাদের খুব প্রশ্ন উঠে। প্রশ্নটা হলো,  শূন্য কি জোড় নাকি বিজোড়? জোড়ের সংজ্ঞা থেকে আমরা বুঝেছি, যে সব সংখ্যা ২ দিয়ে বিভাজ্য তারা জোড় আর যাদের ২ দিয়ে ভাগ করা যায় না, তারা বিজোড়। 


কিন্তু শূন্যকে যদি কিছু দিয়ে ভাগ করি তাহলে সেটার রেজাল্ট সবসময়ই শূন্য হবে। তাহলে শূন্য জোড় না বিজোড় কিভাবে বুঝব? 

শূন্য জোড় না বিজোড় সেটা বোঝা যায় একটু ভিন্নভাবে। দেখ, দুইটা ক্রমিক জোড় (২,৪ বা ১০০,১০২)  বা ক্রমিক বিজোড় (৩৩,৩৫) সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য ২। এখন আমরা যদি শূন্যের সাথে ২ যোগ বা বিয়োগ করে জোড় সংখ্যা পাই তাহলে শূন্য জোড়। আর বিজোড় সংখ্যা পেলে শূন্য বিজোড়। 

০+২ = ২

০-২ = -২

তাহলে বলা যায় শূন্য জোড়। কারণ শূন্যর সাথে ২ যোগ বা বিয়োগ করলে সে সংখ্যাটা হয় জোড়। এখানে একটা বিষয় জানা দরকার, নেগেটিভ বা পজিটিভ সংখ্যা জোড় বিজোড় হয়, কিন্তু ভগ্নাংশ কখনো জোড় বিজোড় হয় না। কারণ ভগ্নাংশ কখনো নিঃশেষে বিভাজ্য হয় না‌!




. পাটিগণিতের শুরু ও ইতিহাস 



ব্রাটার খুব খুশি, সাথে সঙ্কিত কারণ তার ফার্মে ১ টা ছাগল বেশি এসেছে। সব গুলি পাথর মোচায়(পাত্র) রাখা হয়েছে তবুও  একটি ছাগল বাকি! হায়তো আরেকজনের ছাগল! বাড়তি ছাগল পেয়েই সে খুশিতে আত্মহারা। সে এই ছাগলের জন্য আরেকটা পাথর খুজতে বের হলো।

ব্রাটার হাটছে আর ভাবছে, একদিন তার অনেক বড় খামার হবে, সে সেখান থেকে কয়েকটা ছাগল পাল্টে গরু আনবে। তারপর আরও বড়ো খামার। এই মুহুর্তে সে আরো বেশি চিন্তায় পড়ে গেলো,  ধাঁধায় পড়ে গেলো।

  পাথর পাওয়া গেছে , সে পাথর নিয়ে রওনা হলো।  

ধাঁধার রহস্য সমাধান এখনো হয় নি। সে চিন্তায় ভাটা দিয়ে বিষন্ন মনে বসে রইলো।  

হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে দৌড়ে ফার্মে গেল। সে দাগ কেটে কেটে ছাগলগুলো বুঝানোর চেষ্টা করলো আর সফলও হলো। একটা ছাগল একটা দাগ, দুইটার জন্য দুইটা দাগ। তার এখন আর চিন্তা নেই। সে এখন সহজেই তার ফার্ম দেখাশুনা করতে পারবে। 

পরদিন ছাগল চড়ানোর জন্য আর সে মোচায় করে পাথর নিল না। শুধু কয়েকটা কাঠি নিয়ে গেলো। 

কিন্তু সে এখনও জানে না সে যে নতুন একটা আবিষ্কার করে বসে আছে। যেটার নাম "ট্যালি"।

এই গল্পটা কাল্পনিক, কিন্তু ভাবটা সত্য। আজকে আমরা যে বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করব, অনুভব করার চেষ্টা করব সেটা হলো পাটিগণিত। যেহেতু যোগ, বিয়োগ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে তাই, এই দুইটার কথা বেশি বলা হয় নি।


কার কত গুণঃ-

        

      গুণ দিয়ে বোঝায় বারবার যোগ করা। মানে হলো একটা সংখ্যা যদি বারবার যোগ হয় তখন সেই কাজটা সহজ করার জন্যে গণিতবিদরা গুণের অপারেশন আনেন। একটা কথা বলে রাখি, পদ্ধতি আর প্রক্রিয়া বাংলা ভাষায় এক অর্থ বোঝালেও গণিতের ক্ষেত্রে কিন্তু এক না। গণিতে পদ্ধতি মানে ধরন, যে উপায়ে কোনো কাজ  করা হয়।  আর প্রক্রিয়া মানে হল কিছু একটা করা, একটা নতুন রূপ দেওয়া। এজন্যই "+ ,–, ×, ÷" এগুলোকে প্রক্রিয়া চিন্হ বলে। মানে হল এইগুলো দিয়ে একটা কিছু করা হয়,  নতুন রূপ দেয়া হয়। যেমন, 3+4 =7 মানে 3 আর 4 মিলে হয় 7। তো গুণের ধারণাটা হলো বারবার যোগ করা। যেমন 3 যদি 2 বার যোগ হয় সেটাকে লেখা হয় 3×2=6 মানে 3+3=6।  এটাতো সহজ,  কিন্তু যদি 3 কে 25   বার গুণ করতে হয়। তখন? সেটা কতো বড়ো আর কঠিন হবে! তাই আমরা গুণ ব্যবহার করি! 

আমরা সেই ছোট্টবেলা থেকে গুণের একটা কৌশল জানি সেটা হলো 

           12

        × 12 

...................

           24  

         12×

     ............ 

        144

এই যে, এই পদ্ধতিটা সাথে আমরা সবাই পরিচিত।  আমরা যখন অংক করি, তখন 2 দিয়ে 12 গুণ দেই, তারপর নিচের লাইনে সবার ডানে একটা" ক্রস" দিয়ে তারপর 1 দিয়ে উপরেরটা আবার গুণ। কিন্তু কেন এই ক্রস বা "0" দেই? 

আমরা জেনেছি যে গুণ মানে বারবার যোগ করা। এখন 12×12 মানে 12 কে 12 বার যোগ করা, আবার আমরা চাইলে 12 কে  7 বার ও 5 বার যোগ করে সেই দুটি যোগফলও যোগ করে দিতে পারি। 

এখন আমাদের পদ্ধতিতে তাকাই, আমরা 12 কে 2 দিয়ে গুণ দিলাম, 2 বার 12 যোগ করলাম।  তারপর 1 দিয়ে গুণ দিলাম, আর সবচেয়ে ডানে দিলাম ক্রস। কিন্তু আমরা আসলেই কি 1 দিয়ে গুণ দিলাম? আমাদের সংখ্যা পদ্ধতিতে একটা সংখ্যার নিজস্ব মান যেমন আছে, তেমনি আছে ঐ অংকের স্থানীয় মান। আর এই দুই মান মিলেই একটা সংখ্যায় কোনো একটা অংকের মান হয়ে থাকে।  আমরা যখন 1 দিয়ে গুণ দেই, সেটা 1 দিয়ে গুণ দেয়া না, 10 দিয়ে গুণ দেয়া। আর সে কারণেই একক স্থানে বা সবার ডানে একটা ক্রস বা "0" দেই, যাতে সেটার দশক স্থানের মান বের হয়! এই পদ্ধতি, কৌশলগুলো খুবই মজার, শুধু খুঁজে নিতে হয়! 


ভাগের সুরঃ-

     ভাগ অপারেশনটা বন্টনের উপর ভিত্তি করে আসে। বন্টন বিধি বা বন্টনের পদ্ধতিটা বুঝতে পারলে ভাগও বুঝা সম্ভব। 

বন্টন দিয়ে যা বোঝায় সেটা হলো, কয়েকটা উপাদান সবার মধ্যে সমান ভাবে দিয়ে দেওয়া, বা ভাগ করা।  তাই এই অপারেশনটার নাম "ভাগ"। 

চলো বন্টন কিভাবে করা যায় সেটা দেখি। কিছু জিনিস ধরো বই আমার কাছে আছে, এখন আমি বই বিতরণ করব। আমার কাছে 6 টা বই আছে, আর মানুষ আছে 3 জন, টনু,(t) মনু,(m) হনু(h)।  আমি সবচেয়ে সহজ ভাবে যেটা করব, সেটা হলো 1 বই t কে দিলাম, আবার আরেকটা বই m কে দিলাম, তারপর h কে। এভাবে একটা একটা করে 3 জন কে দিতে পারি।আর এই বন্টনের গাণিতিক বাক্য হলো "6÷3"। 

এভাবে বন্টনের পর, টনু, মনু,হনু সবাই 2 টা করে পেল। যেটাকে গাণিতিকভাবে লিখতে পারি 6÷3=2।  এই পদ্ধতিতে সবাই যতটা বই পাবে সেটাই হলো আমাদের ভাগফল  (2)। আশা করি এই পদ্ধতিটা সবাই বুঝতে পেরেছ। 

এখন আরেকটা বিষয় চিন্তা করি, প্রতি বছর সরকার আমাদের কত বই দেয়।  তারা কিভাবে বন্টন করে?  তারা যদি এভাবে বলে এই যদু, আয় একটা বই নিয়ে যা, এই কদু তুই আয়, তারপর তুই। এভাবে দিতে থাকলে একেবারে শেষ! তারা যেই পদ্ধতিতে দেয় সেটা হলো, প্যাকেট! 

যদি 100টা বই থাকে, যার মধ্যে প্রতি স্টুডেন্ট পাবে 2টা করে।তখন তারা 2 টা করে বই প্যাকেট করতে থাকবে। এভাবে প্যাকেট করা শেষ হলে তারা বই বিতরণ করবে। 

এখানে এই ব্যাপারটা খেয়াল করো, এই পদ্ধতিতে আমাদের বন্টনের গাণিতিক ফর্ম হলো : 100÷2। আর ভাগফল হলো, যতটা প্যাকেট বানানো যায়, মানে ভাগফল হলো 50। মোট 50 জন কে দিতে পারবে।

প্রথম আর দ্বিতীয় পদ্ধতির তফাতটা কি বুঝতে পেরেছ! প্রথম পদ্ধতিতে বলেছে 3 জনের মধ্যে 6টা বই বিতরণ করতে হবে,  দ্বিতীয় পদ্ধতিতে 100টা বই 2টা করে ভাগ করে দিতে হয়েছে। প্রথম ক্ষেত্রে ভাগফল ছিল 1 জন কতটা বই পেয়েছে আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ভাগফল হলো যতজন বই পেয়েছে। এখানে কিন্তু কতোটা বই পাবে সেটা মূল বিষয় না। 

আমি কেন দুইভাবেই বললাম। কারণ আমাদের স্কুল পর্যায়ে প্রথম পদ্ধতিটা শিখানো হয়ে থাকে, দ্বিতীয়টা না। কিন্তু দ্বিতীয় পদ্ধতি দিয়ে সব কিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব, বিশেষ করে ভগ্নাংশ, যেটা প্রথম পদ্ধতিতে সম্ভব না।  এখন আরেকটা বিষয়, এই পদ্ধতিগুলো  তো আমরা বুঝলাম। কিন্তু এখন আমরা এটা দিয়ে কি করব। আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো গণিত যেন সবাই বুঝতে পারে। কোনো গাণিতিক বাক্য যাতে  প্রশ্ন সলভের পাশাপাশি কি বোঝায় সেটাও বুঝতে পারি। তাই এখন যদি আমরা দেখি 6÷3=2, আমরা বুজতে পারব এটা বোঝাচ্ছে, 6 টা বস্তু (যেকোনো কিছু) থেকে যদি 3টা করে বস্তু নিয়ে প্যাকেট বানাই তাহলে প্যাকেট হবে 2 টা ( দ্বিতীয় ও অধিক কার্যকর উপায়ে ব্যাখ্যা করলাম)। 

 চলো, ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে কেন 1নং উপায়ের চেয়ে 2নং বেশি কার্যকর, সেটা দেখি,(উদাহরণ হিসেবে এইবার মিষ্টির প্যাকেট বানাই!) ।  1নং উপায়ে সমাধান করি। 5 টা মিষ্টি থেকে  3টা নিয়ে প্রথমে একটা প্যাকেট বানাই। বাকি থাকে 2 টা।  এখন দেখো একটাতো পূর্ণ প্যাকেট আছে।  আর বাকি আছে 2 টা মিষ্টি। পূর্ণ প্যাকেট হতে লাগবে 3 টা কিন্তু আছে 2 টা, এই কথাটা এভাবে লেখা যায় 3÷2 বা 2/3।  অর্থাৎ যতটা  বাকি(2) সেটা আর পূর্ণ প্যাকেট হতে যতটা লাগে(3) তার অনুপাত।  এখন পুরো ভাগটাকে লেখা যায় 1 সমস্ত 2/3। এই জায়গায়  খেয়াল করো। মজা শুরু এখানেই। এখন মিশ্র ভগ্নাংশকে অপ্রকৃত ভগ্নাংশে প্রকাশ করলে পাই, 5÷3। দেখেছ কিভাবে আমাদের ফল মিলে গেলো। কিন্তু 2নং উপায়ে করলে কিন্তু এটা মিলতো না। আগ্রহীরা করে দেখো! 

এই যে কাজটা করলাম 1 সমস্ত 2/3 আকারে লেখলাম এখানে 2 হলো ভাগশেষ আর 3 হলো ভাজক। আর এই জন্যই ছোটোবেলায় যখন ভাগশেষ থাকতো, তখন ভাগশেষ লবে আর ভাজক হরে লিখতে হতো।  আর এতো সুন্দর জিনিস আমরা মুখস্ত করে যেতাম!


প্রথম  পর্বের সমাধানঃ-

   প্রথম  পর্বে একটা প্রশ্ন দিয়েছিলাম, কেন বিজোড় সংখ্যার সাথে 2 গুণ দিলে জোড় সংখ্যা পাওয়া যায়? এর সাথে দেখিয়ে ছিলাম কেন 2 দিয়ে নিঃশেষে বিভক্ত হলে সেটা জোড় হয়। এখন গত পর্বের প্রশ্নোত্তর খুঁজি। 

ধর একটা বক্সে 2 টা উপাদান আছে, আমি যদি তার সাথে 2 গুণ করি অর্থাৎ আরো একটা 2 উপাদানের বাক্স যোগ করি, তাহলে কিন্তু প্রতি বাক্সে 2 টা করেই থাকবে, মানে জোড় হবে।  তখন আমরা যেটা পাবো সেটা হলো 4। 

আবার যদি 3 টা উপাদানের একটা বাক্স থাকে,  তখন জোড় সংখ্যক উপাদান নিয়ে (2টা) আরেকটা বাক্স বানানো যায়, আর 1 টা উপাদান অবশিষ্ট থাকে।  যদি আমি আরেকটা 3 উপাদানের বাক্স আনি, তখন সেটার মধ্যেও একটা অবশিষ্ট উপাদান থাকবে। তখন 2 বাক্সের 2টা অবশিষ্ট উপাদান মিলে জোড় সংখ্যা হয়ে যাবে। তাই 2 দিয়ে গুণ দিলে, যেকোনো সংখ্যা জোড় হয়।  জোড় সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আগের পর্ব পড়ে আসতে পারো। 


৩. পাটিগণিতের মূল বিষয়ঃ


          পাটিগণিতের অপারেশনগুলো হলো, যোগ, বিয়োগ, গুণ আর ভাগ। 

আমরা জানি বিয়োগকে পরোক্ষভাবে যোগ দিয়ে লিখা যায়। যেমন, 2-1 কে লেখা যায় 2+(-1)।  

আবার গুণ হলো বারবার যোগ।  আর ভাগ হলো বারবার বিয়োগ। এই ভাগের কথাটাই আমাদের মন মানতে চায় না। চলো এটার গভীরে যাই। 

আমার কাছে 10টা আম আছে,  আমি যদি 10টা আম থেকে 2টা দিয়ে দেই। থাকে কয়টা? 8টা আবার এই জায়গা থেকে 2টা দিলে থাকে 6 টা।  এভাবে দেখা যায়, 5 বার দিতে থাকি, তাহলে আমার আম শেষ হয়ে যাবে।  আর এটাকেই লেখা যায় 10÷2=5। অর্থাৎ আমি 2টা করে আম দিতে থাকলে মোট 5 জনকে দিতে পারব। আর এই 10÷2=5 কে লেখা যায়। 

১০-২=৮

৮-২=৬

৬-২=৪

৪-২=২

২-২=০ 

এভাবে বিয়োগ করতে করতে 0 তে গেলে আমরা আমাদের রেজাল্ট পেয়ে যাব। 

এখন, ভাগকে বিয়োগ আকারে লেখা যায়।  বিয়োগকে যোগ আকারে। তাই পাটিগণিতের মূল বিষয় হলো, যোগ। 

কী সুন্দর একটা শাখা, পাটিগণিত। যার থেকেই পরবর্তীতে আসে, গণিতের অন্য শাখা!


তথ্যসূত্র:-

১.সংখ্যার ইতিহাস :ট্যালির আবিষ্কারের মূলভাব, কিন্তু গল্পটা নিছক কল্পনা ও বানানো।  কে জানে হয়তো এভাবেই ট্যালির আবিষ্কার হয়েছে!


২.প্রাণের মাঝে গণিত বাজে :বীজগণিতের গান বই থেকে পাটিগণিতের মূল বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়েছে।






Oyahidur Rahman Mohin

I am Mohin. Reading, writing and thinking are my passion. I usually write fiction and non-fiction for pleasure. And I am trying to touch the tune of life. "Life is really very simple but we insist on making it complicated."

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম